গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসবের পর ৪২ দিনের মধ্যে মায়ের মৃত্যুই মাতৃমৃত্যু। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে দশজন মা মারা যায়। বর্তমানে মাতৃমৃত্যুর হার ১২৩.টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু ৭০ এ নামিয়ে আনতে হবে। আমাদের দেশে ২০০০ সালেও মাতৃমৃত্যু ছিল ৪৪১.গত দুই দশকে মাতৃমৃত্যু অনেক কমেছে। কিন্তু এখনো এটা উদ্বেগজনক। আরো অনেক দুর যেতে হবে। আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ কমেছে, গর্ভনিরোধক বেড়েছে। এসব সত্বেও মাতৃমৃত্যু কমাতে হাসপাতালে বা সেবা প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারির বিকল্প নেই। এখনো আমাদের প্রায় ৫০ ভাগ ডেলিভারি বাড়িতে হয় অদক্ষ, প্রশিক্ষণ বিহীন ধাত্রীর হাতে। গ্রামেই এ সংখ্যা বেশি। বাড়িতে জন্মের সময় অনেক শিশু অসুস্থ হয়, মারা যায়, মায়ের জটিলতা দেখা দেয় এমনকি মা মারাও যায়।এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। একটি শিশু জন্মের সময় মা হারালে তার জীবন কতটা অনিরাপদ তা আমরা সবাই বুঝি। মায়ের নিরাপদ ডেলিভারীর জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভিন্ন বেসসরকারী ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে সাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দেয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে মায়েরা ডেলিভারি করালে মাতৃমৃত্যু কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাড়িতে প্রধানত অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ ও খিঁচুনির কারণে মা মারা যায়। তাদেরকে হাসপাতালে নিলেও এমন অবস্থা থাকে যে অনেক সময় কিছুই করার থাকেনা। হাসপাতালে প্রসব করা মায়ের অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত না হওয়ার কারণ হলো পরিবারের সদস্য দের অনিচ্ছা, অসচেতনতা, আর্থিক সংকট, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দক্ষ জনবলের অভাব। এখনো অনেক দম্পতি কোন পরিকল্পনা ছাড়াই বাচ্চা নেন। বর্তমানে প্রত্যেক দম্পতির সন্তান জন্মহার ২.২. ঘন ঘন গর্ভ ধারন মায়ের দুর্বলতা এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিটি জন্মকে পরিকল্পনা মাফিক করতে হলে প্রসবের পরপরই জন্মবিরতিকরণ ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের প্রতিটি স্তরের শিক্ষিত সচেতন জনগণ নিজের জায়গায় থেকে আওয়াজ তুলতে হবে, ডেলিভারির জন্য বাড়ি নয়,প্রতিষ্ঠানই নিরাপদ। এটা প্রমাণিত যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা প্রসব করালে আমরা নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো। তাই আসুন সকলে সচেতন হই এবং গর্ভবতী মা কে সেবাকেন্দ্রে নিয়ে যাই।
লেখক : প্রসুতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ