মাতারবাড়ি ঘিরে বড় পরিসরে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে অচিরেই

প্রধান উপদেষ্টা যাচ্ছেন ২৫ আগস্ট

হাসান আকবর | সোমবার , ১৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অচিরেই বড় পরিসরে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। কক্সবাজারের মহেশখালী এবং কুতুবদিয়ার কিছু অংশ নিয়ে শুরু হওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নতুন মাত্রা দিতে গঠন করা হয়েছে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা)। নবগঠিত এই সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীকে। মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকার কার্যক্রম সরেজমিনে দেখতে আগামী ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস যাচ্ছেন মহেশখালীতে। মাতারবাড়ি বন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনি পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। মাতারবাড়ি ১২শ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়িতে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সূচনা হয়, ইতোমধ্যে তা বিশাল কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। জাপানের জাইকা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগারি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছে। ১২শ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লা পোড়াতে হবে। দুই মাসের প্রয়োজনীয় অন্তত ৬ লাখ টন কয়লা এই কেন্দ্রে মজুদ রাখতে হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জ্বালানির যোগান দিতে বিদেশ থেকে প্রতি মাসে অন্তত তিন লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হবে। একেকটি জাহাজে ৬০ হাজার টন কয়লা পরিবহন করলেও মাসে অন্তত ৫টি মাদার ভ্যাসেল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য হ্যান্ডলিং করতে হবে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কয়লা আমদানির পথঘাট তৈরি করতে ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চ্যানেল তৈরি করতে হয়। ২৫০ মিটার প্রস্থের ১৬ মিটার গভীর এই চ্যানেল ধরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট এবং বিপুল পরিমাণ কয়লাও আমদানি করা হয়। এই চ্যানেল তৈরি করার সময় জাইকার একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরে এসে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর করা যায় বলে জানিয়ে পুরো বিষয়টি তুলে ধরে। তারা জানান, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার গভীর এবং ২৫০ মিটার প্রস্থ যে চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে সেটিকে যদি পাশে ১০০ মিটার বেশি প্রস্থ করে ৩৫০ মিটার এবং গভীরতা ২ মিটার বাড়িয়ে ১৮ মিটার করা হয় তাহলে এটি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। জাপানের প্রতিনিধিদলের এই পরামর্শ অনুসরণ করে গড়ে উঠে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।

মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করার লক্ষ্যে সরকার একটি সমন্বিত অথরিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। বিশেষ করে শিল্প স্থাপন, বিদ্যুৎ, পরিবহন, ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করার ক্ষেত্রে এই অথরিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গত ২৩ জুন সরকার ‘মহেশখালীমাতারবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ এলাকাকে নিয়ে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা) গঠন করে। মহেশখালীমাতারবাড়ী অঞ্চলে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে এনে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করে উপকূলীয় অঞ্চলকে শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে মিডা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

সরকার মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে বেশ কয়েকটি হাব গড়ে তুলবে। এর মধ্যে প্রাইমারি হাব হিসেবে বন্দর ও লজিস্টিক হাব, শিল্প ও ম্যানুফ্যাকচারিং হাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাব, মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ হাব গড়ে তোলা হবে। সহায়ক হাব হিসেবে আধুনিক টাউনশিপ হাব গড়ে উঠবে। বিচ্ছিন্নভাবে চলা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কিংবা বন্দরের কার্যক্রমকে একই ছাতার নিচে এনে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

অচিরেই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আসতে পারে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম দেখার জন্য যাচ্ছেন। তিনি মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া অঞ্চলের বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং গভীর সমুদ্রবন্দরের যে মহাযজ্ঞ তা সরেজমিনে ঘুরে দেখবেন। রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়গুলোও প্রধান উপদেষ্টা দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন। নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) . সাখাওয়াত হোসেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানসহ কয়েকজন উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হবেন। মিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো প্রধান উপদেষ্টার নিকট তুলে ধরবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চল সফর পুরো এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অ্যাকশন প্ল্যানে নতুন মাত্রা আনবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে আবাসন সংকট : প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ৮ ঘণ্টা বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে যানজট নিরসনে উচ্ছেদ অভিযান, অর্থদণ্ড