কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর এবং ব্যয় ৬ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৩৭ শতাংশ। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে হাটিকামরুল–রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি–একনেক সভায় এই ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া এই গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের খরচ সামান্য বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয়বারের মত সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়াল ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। এক তৃতীয়াংশের বেশি ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা না করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ‘টেকনিক্যাল’ এবং তিনি এ বিষয়ে পুরোপুরি ‘অবগত’ নন। তিনি জানান, অতিরিক্ত এই অর্থ জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে দেবে সরকারকে। খবর বিডিনিউজের।
সভায় দেশের প্রথম এবং একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। সভার পর ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারে এটিই একমাত্র ‘বড় অবকাঠামো প্রকল্প’ হতে পারে। তিনি বলেন, মাতারবাড়ীতে যেহেতু একটা জেটি হয়েই গেছে, আবার একটা গভীর সমুদ্রবন্দর করার প্রকল্প, আমরা বিবেচনা করেছি। এটা একটা বড় প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্পের অনেক ভূ–রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে এবং কারা করছে এটাও একটা বড় বিষয়।
প্রকল্পটির গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, প্রথমত আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দর লাগবেই এটা আমরা সবাই জানি। চট্টগ্রামের সেই সক্ষমতা নাই, পায়রা বন্দরের তো একদমই না। বাংলাদেশের যখন আরও ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়বে, একটা গভীর সমুদ্র বন্দর না হলে ব্যবসা খরচ অনেক বেড়ে যায়। এটা আমরা সাহস করে করলাম এই কারণে যে, অনেকদিন ধরে চীন করবে না ভারত করবে, এ নিয়ে বহু টানাপড়েন চলছিল, কোনোকিছুই হচ্ছিল না। জাপানের অর্থায়ন নিয়ে বলেন, আমরা ভাবলাম যে, জাপান কিন্তু একটা দেশ যেটা অত্যন্ত সহজ শর্তে ঋণ দেয়। জাপানি প্রকল্পগুলো একমাত্র প্রকল্প সম্ভবত যেগুলো কিছুটা দক্ষিণ কোরিয়াও ঠিক খরচের মধ্যে ঠিক সময়ের মধ্যে শেষ হয়। যেমন, মেট্রোরেলের ৫ লাইনটা, ঢাকা তৃতীয় বিমানবন্দর।
সরকারি গাড়ির হিসাব চাইলেন : প্রকল্প গ্রহণের সময় অসংখ্য গাড়িও চাওয়া হলেও পরে সেগুলো কোথায় ব্যবহার হয়, কী হয়, তার সঠিক তথ্য কেউ জানে না বলেও মন্তব্য করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, সারা দেশে কতগুলো গাড়ি আছে তার একটা হিসাব করব। আমরা দেখেছি এক কর্মকর্তা তিনটি গাড়ি ব্যবহার করেন। নিজের গাড়ি টেকে বেশি দিন, কিন্তু সরকারি গাড়ি দ্রুত নষ্ট ও অপচয় হয়। খুব শিগগির তথ্য জোগাড় করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কত গাড়ি কীভাবে ব্যবহার হয়, কারা ব্যবহার করে সব হিসাব হবে। কোনো সরকারি গাড়ি নষ্ট হলে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে।