মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সমুদ্র সৈকত মহেশখালীর পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী

| শনিবার , ২৯ জুন, ২০২৪ at ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মাত্র ১০ বছর আগেও যেখানে ছিল উপকূলীয় প্যারাবনের ঝোপ জঙ্গলে ভরা গরু মহিষের গোচারণ ভূমি, কালের বিবর্তনে আজ সেই গোচারণ ভূমি পরিণত হয়েছে সিঙ্গাপুরের আদলে শহর। একদিকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প অপরদিকে গভীর সমুদ্র বন্দর। দিনে দিনে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার। সব মিলিয়ে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ও কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে ঘরে উঠছে নতুন পর্যটন স্পট। সামপ্রতিক সময়ে মাতারবাড়ি সমুদ্র সৈকতে নেমেছে স্থানীয় ও দেশিবিদেশি পর্যটকের ঢল। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা সমুদ্রসৈকত হতে পারে জেলার আরেকটি নতুন পর্যটন জোন।

গতকাল শুক্রবার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ সংলগ্ন কোহেলিয়া নদীর উপর নির্মিত নতুন ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নবনির্মিত ব্রিজ ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল। স্থানীয়রা জানান, ঈদের পর থেকে ছুটিতে গ্রামে আসা লোকজন মাতারবাড়ি সমুদ্র সৈকত, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও নবনির্মিত ব্রিজ দেখতে আসছে দলে দলে। মহেশখালী উপজেলায় উল্লেখযোগ্য অন্য কোনো পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় ভ্রমণের জন্যে মাতারবাড়ি সৈকতকেই বেছে নিয়েছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। এছাড়া অনেকে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দেখতে মাতারবাড়িতে আসছেন।

মাতারবাড়ি সমুদ্র এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের ঝাউবাগান ও বালুচরে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় পর্যটক অবস্থান করছেন। সৈকতে আঁচড়ে পড়া ঢেউয়ের পানিতে ভিজে উল্লাসে মেতেছেন তারা। সৈকতের দীর্ঘ এলাকা ঘুরে দেখছেন অনেকে। কেউ কেউ সৈকতের ঝাউবাগানে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। চকরিয়া থেকে আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে শুনেছি মাতারবাড়ি সমুদ্র সৈকত ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে দলে দলে মানুষ আসছে। তাই সমুদ্র বন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎ দেখতে আমিও এসে সত্যিই মুগ্ধ হলাম। মাতারবাড়ি সমুদ্র সৈকত এলাকা নিয়ে যদি সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করা হয়, তাহলে এটি হবে জেলার নতুন আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র।

হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা কফিল উদ্দিন বলেন, ঈদে অফিস থেকে ছুটি পাওয়ায় বাড়িতে ঈদ করতে এসেছিলাম। এখানে অন্য কোনো বিনোদনের স্পট না থাকায় বন্ধুবান্ধবদের সাথে নিয়ে মাতারবাড়ি সৈকতে ঘুরতে আসা। এখানে অনেকটা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতোই দেখতে। শুধু অনুপস্থিত রয়েছে কিটকট চেয়ার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক ও ঘোড়া। এসব আনা হলে কক্সবাজার ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের মতোই দেখতে হবে এ মাতারবাড়ি সমুদ্র এলাকা।

মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আবু হায়দার বলেন, অদূর ভবিষ্যতে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটার বিস্তৃর্ণ সমুদ্র সৈকত হতে পারে জেলার আরেকটি নতুন পর্যটনকেন্দ্র। এতে করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উপর পর্যটকদের অনেকটা চাপ কমতে পারে। ভবিষ্যতে মাতারবাড়ির এই সমুদ্রসৈকত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এর জন্যে প্রয়োজন যোগাযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যাপক প্রচারণা।

এ বিষয়ে মহেশখালীকুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালী তোতা কক্সবাজারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মহা পরিকল্পনা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে রেললাইন স্থাপন, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল, গ্যাস লাইন স্থাপন, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর ও এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মেগা প্রকল্প নিয়ে লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছেন। এসব মেগা প্রকল্পকে ঘিরে কক্সবাজারের মহেশখালী তথা মাতারবাড়িও নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে মাতারবাড়িধলঘাটার বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকতকে নতুন পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করা যেতে পারে। এতে করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উপর কিছুটা চাপ কমতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগায়ে হলুদের আগে তরুণীর আত্মহত্যা, থানায় মামলা
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন