মাতামুহুরীর দুই তীরে সবজির সমারোহ

ভালো দামে খুশি কৃষক

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে বিরাজ করছে সবুজ সবজির সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় ধু ধু বালুচরকে সবুজে আচ্ছাদিত করে রেখেছে এই সবজি ক্ষেত। চলতি বছর মোটামুটি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাতামুহুরীর দুই তীরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সবজির এই বাম্পার ফলন হয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। কাঙ্খিত ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো পাওয়ায় আগাম সবজির আবাদ করে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছে কৃষক পরিবারগুলো।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার প্রায় দুই মাস আগেই শীতকালীন আগাম সবজির আবাদে নেমে পড়েন লক্ষাধিক প্রান্তিক কৃষক। কৃষি বিভাগ এবার শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাল শাক, পুই শাক, ধনিয়া পাতা, শিম, বরবটি, ঢেঁড়শ, মিষ্টিকুমড়া, তিত করলাসহ রকমারি সবজি আবাদের সেই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হওয়ার পথে। সেই হিসেবে এবার প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের জমিতে সবজি ফলিয়ে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছে।
কৃষি বিভাগ আরো জানায়, কয়েকদিন আগে থেকে ফের রোপণ শুরু করা হয়েছে রবি শস্যের। তন্মধ্যে আলু, মিষ্টি আলু, সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবিশষ্যের আবাদে নেমে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ ২ হাজার ৬৩৬ হেক্টরে এই রবি শস্যের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের ক্ষেত থেকে শীতকালীন সবজি তুলে বাজারে বিক্রি ও দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানোর ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। এতে এখানকার লক্ষাধিক প্রান্তিক কৃষক পরিবার শীতকালীন রকমারি সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে দৈনিক আজাদীকে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং চলতি বছর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব না পড়ায় মাতামুহুরী নদীর দুই তীর জুড়ে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নামার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে প্রায় দুইমাস আগে থেকেই নানা সহায়তা দিয়ে আগেভাগে মাঠে নামানো হয় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের পৌরসভার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুরসহ অন্তত ১০টি ইউনিয়নের কৃষককে। বেগুন, মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ শীতকালীন আগাম সবজি ঘরে তুলতে প্রান্তিক এসব কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতকালীন সবজি ছাড়াও বছরের বারো মাসজুড়ে এসব কৃষক মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির আশীর্বাদ এবং তীরের উর্বর মাটির ক্ষেতে রেকর্ড পরিমাণ নানান রকমারি ফসল উৎপাদন করে আসছেন।

উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদী তীরের দ্বীপকূল এলাকার কৃষক মো. ছাবের জানান, প্রতিবছর মাতামুহুরী নদীর তীরের প্রায় তিন কানি জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করেন তিনি। এবারও এই পরিমাণ জমিতে শীতকালীন আগাম রকমারি সবজির চাষ করেন। কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শে প্রায় দুইমাস আগে মাঠে নেমে পড়েন তিনি। এতে ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে বেগুন, মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রিও শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি চাষে নেমে অন্য বছরের চাইতে প্রায় দুই লাখ টাকা বেশি আয় হবে এবার, এমনটাই জানালেন তিনি।

চকরিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আমানপাড়ার কৃষক নাজেম উদ্দিন বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য শ্রমজীবী লোক নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করানো হচ্ছে। চারা রোপণ থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির সঙ্গে সারও প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্ষেতে। তিনি জানান, শীত শুরু হওয়ার আগে থেকেই পুরোদমে মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ভরে ওঠেছে সবুজে। দুইমাস আগে থেকেই সবজি উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরি, বীজ বপন, সেচ দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজও শেষ করা হয়। এতে বাজারে রকমারি সবজির সমারোহ হয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, আমার ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবছর শীতকালীন সবজির আবাদ করেই তারা স্বাবলম্বী হন। এবার বন্যা না হওয়ায় আগাম সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় তাদের। তাই আগে থেকেই মাঠে নেমে পড়ায় শীতকালীন সবজিও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের চাইতে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন আমার ওয়ার্ডের কৃষকেরা।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, অতি বৃষ্টির ধকল না থাকাসহ এবার বর্ষা মৌসুমে বন্যা না হওয়ায় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল বেশ। তাই শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় শীতকালীন আগাম সবজি চাষে। এতে পৌরসভাসহ মাতামুহুরী তীরের অন্তত ১০টি ইউনিয়নের কৃষকেরা সবজি চাষে মাঠে নামেন। ইতোমধ্যে নদীতীরের কোনো কোনো ক্ষেত থেকে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, বরাবরের মতোই মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানি ব্যবহার করে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন এখানকার কৃষকেরা। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হয় কৃষকদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮ বছরেও শেষ হয়নি কাজ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ১৫ পৌরসভা পেল দুই কোটি ৮১ লাখ টাকা