ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক অকুতোভয় নারী মাতঙ্গিনী হাজরা। ব্রিটিশদের দীর্ঘ অপশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি নির্ভীক সংগ্রামীর ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। মাতৃভূমির মর্যাদা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন বিপ্লবী এই নারী।
মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম ১৮৭০ সালের ১৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে। পিতা ঠাকুরদাস মাইতি ছিলেন দরিদ্র কৃষক। অল্প বয়সেই তিনি কন্যাকে পাত্রস্থ করেন। কিন্তু মাতঙ্গিনীর ১৮ বছর বয়সে স্বামী ত্রিলোচন হাজরা মারা যান। নিঃসন্তান মাতঙ্গিনী হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। এভাবেই দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। ব্রিটিশদের অন্যায়–অত্যাচার তাঁকে ভীষণ পীড়িত করে।পরিণত বয়সে ব্রিটিশদের শাসন–শোষণের প্রতি তীব্র ঘৃণা তাঁর মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে তিনিও যোগ দেন। ১৯৩২ সালের ২৬ জানুয়ারি মেদিনীপুরের নেতারা জাতীয় পতাকা নিয়ে যে বিপ্লবী শোভাযাত্রা বের করে তাতে ৬২ বছর বয়েসী মাতঙ্গিনীও অংশ নেন। এরপর একে একে বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে নেতৃত্ব দিলে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে দু’দফা গ্রেপ্তার করে। দ্বিতীয়বার তিনি বহরমপুর জেলে ছয় মাস বন্দী থাকেন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে। সে সময় কলেরা, বসন্ত প্রভৃতি রোগের প্রকোপ ছিল বেশি। বৃদ্ধ মাতঙ্গিনী হাজরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে এইসব রোগীর সেবাও করতেন।
স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে। ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ‘ভারত–ছাড়’ আন্দোলনে এক বিরাট স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়ে মাতঙ্গিনী থানা দখল করতে যান। এ সময় ইংরেজ সৈন্যদল নির্বিচারে গুলি চালালে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কিন্তু তেজোদীপ্ত ও অসীম সাহসী বৃদ্ধ মাতঙ্গিনী জাতীয় পতাকা হাতে নির্ভীক পায়ে এগিয়ে যান। পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে, তিনি ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।