মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ

১৫ দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি কমল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা মিল মালিক সিন্ডিকেটকে দুষলেন চাষিরা, ক্ষোভ প্রকাশ

চকরিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

দুই সপ্তাহ আগেও মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণের দাম ছিল ৫০০ টাকা, মিলে ছিল ৫৭০ টাকা। সেখানে ১৫ দিনের ব্যবধানে মাঠে ২৬০ আর মিল পর্যায়ে দাম ৩৪০ টাকায় নেমে এসেছে। এজন্য মিল মালিক সিন্ডিকেটকে দুষছেন প্রান্তিক চাষিরা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দেশে লবণ উৎপাদনের সঠিক চিত্র গোপন করে

 

বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সুযোগ খুঁজছিলেন ঢাকা, নারায়গঞ্জসহ দেশের বড় বড় মিল মালিকেরা। কিন্তু লবণ নীতি ঘোষণাসহ দেশীয় লবণশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সেই সুযোগ হচ্ছে না সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটটির। তাই নতুন করে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে মিল মালিকদের সেই সিন্ডিকেট। যাতে দেশীয় লবণশিল্প থেকে প্রান্তিক চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নেন।

উৎপাদন মৌসুম শুরুর পর থেকে আবহাওয়া অনুকূলে পাওয়ায় প্রায় দেদার লবণ উৎপাদন অব্যাহতভাবে চলছে মাঠে মাঠে। এতে অর্ধ লক্ষাধিক প্রান্তিক চাষি, এক লাখ শ্রমিকসহ লবণের ওপর নির্ভরশীল অন্তত ১০ লাখ মানুষের মুখে হাসি ফুটে। হঠাৎ করে উৎপাদন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে এসে সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে এসব মানুষের।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) জানিয়েছে, দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কঙবাজারের আট উপজেলা চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, কঙবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলার আংশিকসহ ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে এবার লবণ উৎপাদন শুরু করে চাষিরা। তবে গত মৌসুমের চেয়ে এবার বাড়তি তিন হাজার একর জমিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

বিসিকের তথ্য মতে, বিগত মৌসুমে এসব উপজেলায় লবণ উৎপাদন হয় ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে। ওই মৌসুমে সরকার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা করণে সেবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন।

এবার লবণচাষের পরিধি বাড়া প্রসঙ্গে বিসিক কঙবাজারের লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া দৈনিক আজাদীকে জানান, বিদেশ থেকে আমদানি না হওয়ায় দেশীয় চাষিরা উৎপাদনের বিপরীতে ন্যায্যমূল্য পেয়ে আসছে দুইবছর ধরে। এতে প্রান্তিক চাষিরা বেশ উৎসাহ নিয়ে এবারও লবণ উৎপাদনে নামে মৌসুম শুরুর অন্তত ১৫ দিন আগে। তিন হাজার একর বাড়তি জমিতে পরিধি বাড়ে লবণ চাষের।

এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে শতভাগ জমিতে আধুনিক পদ্ধতি (পলিথিন পদ্ধতি) অনুসরণ করে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতির চেয়ে পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদন আড়াইগুণ বৃদ্ধি পায়। এমনকি সনাতনের চেয়ে পলিথিন পদ্ধতির উৎপাদিত লবণের গুণগত মানও বেশ ভাল। তাই দামও ভাল পেয়ে থাকেন চাষিরা।

এদিকে মিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে গতকাল শনিবার দুপুরে একটি হোটেলকক্ষে জরুরি সভা করেছেন কঙবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ। অসাধু মিল মালিক সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র বন্ধ করে দেশীয় লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে জরুরি এই সভা হয়।

সভায় সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যদি ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা না হয় তাহলে দেশের সকল লবণচাষি মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণ মিল মালিকদের সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। এর পরও কাজ না হলে উৎপাদিত লবণ মাঠেই মজুদ বা পানিতে ফেলে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এতে বক্তব্য

দেন সংগঠনের সভাপতি মকছুদ আহমদ কোম্পানি, সদস্য আবু তৈয়ব, নূরে হোছাইন আরিফ, শাহাব উদ্দিন, মৌলভী শহিদুল ইসলাম, জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, সরওয়ার আলম, দলিলুর রহমান, আনিছুর রহমান, মৌলভী সেলিম উদ্দিন, শোয়াইবুল ইসলাম সবুজ, হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে লবণের ব্যাপক দরপতন হয়েছে অসাধু মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে। যেখানে দুই সপ্তাহ আগেও মাঠপর্যায়ে প্রতিমণ লবণ ৫০০ টাকা আর মিলে ৫৭০ টাকা। সেখানে ১৫ দিনের ব্যবধানে মাঠে ২৬০ আর মিল পর্যায়ে ৩৪০ টাকায় নেমে এসেছে। দৈনিক

আজাদীকে তারা বলেন, এই ক্ষেত্রে আমাদের দাবি হচ্ছে, মাঠপর্যায়ে ৪৫০ এবং মিল পর্যায়ে ৫০০ টাকা প্রতিমণ লবণের দাম নিশ্চিত করতে হবে।

বিসিক কঙবাজারের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী জানান, চলতি মৌসুমে ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। তদ্মধ্যে গত তিনমাসে উৎপাদনের হার বেশ ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধর‌্যাংগস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রউফ চৌধুরীর ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধতৃতীয় দফায় তুরস্ক দূতাবাসে গেল ফারাজ করিমের ৩ কোটি টাকার ত্রাণ