মাঠে মাঠে সোনালি ধান

চকরিয়ায় আমনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, খুশি কৃষক

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে খরার আশঙ্কার মধ্যেও আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ায়। ইতোমধ্যে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ থেকে গোলায় উঠেছে ৬৫ শতাংশ ধান। বাকি ধানও ঘরে তোলার তোড়জোড় চলছে মাঠে মাঠে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয় আমন ধানের। প্রতিবছর মধ্য জুলাই থেকে আমন আবাদের মোক্ষম সময় হলেও এবার অনাবৃষ্টির কারণে সঠিক সময়ে ধানের চারা রোপণ করা যায়নি। তবে বিকল্প পন্থায় পানির সংস্থান করে একটু দেরিতে হলেও কৃষক তাদের জমিতে আমন আবাদে নেমে পড়ে।

আবার উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে লবণ পানির কারণেও রোপিত ধানের চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে পড়ে। এতে শত শঙ্কার মধ্যেও আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক। একই সাথে স্বস্তি প্রকাশ করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও।

উপজেলা কৃষি বিভাগের উন্নয়ন শাখার উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাজীব দে জানান, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। তম্মধ্যে উফসি প্রজাতির ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে, ২৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়। উফসি প্রজাতির মধ্যে ব্রি-ধান ৩৩, ৪৯, ৭৫ ও ৮৭ ও হাইব্রিড প্রজাতির মধ্যে ধানি গোল্ড ধানের আবাদ হয়। জৈব প্রযুক্তি ও সুষম সারের প্রয়োগসহ উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের চারা রোপণে এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে এখানে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে বলেন, সবসময় কৃষককে গুটি ইউরিয়া ও এলসিসি পদ্ধতিতে ধান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এতে শত শঙ্কার মাঝেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের পাশাপাশি আমরাও খুশি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চলতি বছর অনাবৃষ্টিতে মাঠে মাঠে খরা দেখা দেয়। তার ওপর উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে ছিল পানির হানা। এরপরও বিকল্প পন্থায় কৃষক যাতে আমনের আবাদ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক দেওয়া হয়। এতে চলতি বছরও আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মাঠ থেকে অন্তত ৬৫ শতাংশ জমির ধান গোলায় তুলতে সক্ষম হয়েছে প্রান্তিক কৃষকেরা। বাকি ধানও কয়েকদিনের মধ্যে গোলায় উঠবে।

সরেজমিন গত কয়েকদিন বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ জোড়া সোনালী আভার ফসলী জমিতে কৃষকদের ব্যস্ততার শেষ নাই। ভোরের কুয়াশাভেজা সময় থেকে সন্ধ্যা অবধি ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াইসহ নানা কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকসহ ধান কাটায় নিয়োজিত শ্রমিকরা।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ভিলেজার পাড়ার কৃষক দলিলুর রহমান, কাকারার মেনিবাজার এলাকার আহমদ হোছন, পৌরসভার আমান পাড়ার জমির উদ্দিনসহ অসংখ্য কৃষক দৈনিক আজাদীকে বলেন, চলতি বছর আমন আবাদ করতে পারবো কী না তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কারণ বর্ষা মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে এবার আমন আবাদের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা। এরপরও বিকল্প পন্থায় পানির সংস্থানসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক পরামর্শ ও প্রণোদনায় এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে মাঠে মাঠে। তবে নানা কারণে খরচ এবার বেশি হয়েছে ধান উৎপাদনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকটি সড়ক পাল্টে দেবে কয়েক হাজার পরিবারের জীবন
পরবর্তী নিবন্ধমুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের সভা