চারদিকে আমন আবাদের সবুজ মাঠ। তার মাঝে কিছু ধানের ফলন এসেছে। সবুজের মাঝে সোনালী ধানের ফলনের এই চিত্রের দেখা মিলেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের বার আউলিয়া এলাকায়। পিচঢালা সড়কের ধারে এমন আবাদ সবার নজর কাড়ছে। ফলন আসা এই আবাদগুলো হল আউশ ধান। ইতিমধ্যেই আউশ ধান পেকে কাটার উপযুক্ত হয়েছে। ভালো ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।
জানা যায়, ভারী বৃষ্টিতে বন্যার পানি আসার পর যখন কৃষকরা আমন আবাদ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তখন আউশ ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাঙ্গুনিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকেরা। বৃষ্টির কারণে শেষ মুহূর্তে ধানক্ষেত নষ্টের আশংকার মাঝেও আউশ ধানের ফলন দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। তবে গেল বন্যায় রাঙ্গুনিয়ায় ৫ হেক্টর আউশ আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই আউশ ধানের আবাদ হওয়ায় পাহাড় অধ্যুষিত এই উপজেলায় পাখির উপদ্রব বেড়েছে বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মে মাসের শুরুতে রাঙ্গুনিয়ার ৩০০ জন কৃষককে পাঁচ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেয়া হয়েছে। কৃষকরা এর সপ্তাহের মধ্যেই বীজতলায় বপন করেছে এবং মে মাসের শেষের দিকে চারা রোপণ করে। যা বর্তমানে ফলন এসে কাটার উপযুক্ত হয়েছে। অনেক আগে থেকেই রাঙ্গুনিয়ায় আউশের আবাদ চলে এলেও মাঝখানে তা অনেকটা কমে আসে। গেল ৪/৫ বছর ধরে আবারও পুরোদমে আউশের আবাদ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে উপজেলার ৮২ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শুরুতে বৃষ্টি কম হওয়ায় উপজেলার ৭০ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। এবছরও একই পরিমাণ আউশের আবাদ হলেও সাম্প্রতিক বন্যায় ৫ হেক্টর আউশ আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আমন ধানের পরিচর্যার মাঝেই কৃষকদের ব্যস্ততা দেখা গেছে পাখির হাত থেকে আউশ ধান রক্ষায়। অনেক জায়গায় আউশ ধানের উপর জাল বিছিয়ে পাখির হাত থেকে এই ধান রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।
লালানগর ইউনিয়নের আলমশাহ পাড়া এলাকার কৃষক মো. জসিম উদ্দিন ৫০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যেই ফলন এসেছে। কিন্তু হঠাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হানা দিচ্ছে তার ক্ষেতে। তাই বাধ্য হয়ে তিনি আউশ ধানক্ষেত জাল দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ফলন বেশ ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি। শুধু তিনিই নন, এই এলাকার কৃষক মো. মুসা, আবু সৈয়দ, মো. সুমনও এবছর ২ একর জমিতে আউশ আবাদ করেছেন।
বেতাগী ইউনিয়নের কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, ইতিপূর্বে সূর্যমুখী আবাদ করেছিলাম। এবার কৃষি অফিসারের পরামর্শে এক একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি, ফলনও ভাল হয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই কেটে ঘরে তুলবো।
উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফরনেছা বলেন, আউশ ধান চৈত্র–বৈশাখে বুনে আষাঢ়–শ্রাবণে কাটা যায়। অর্থাৎ বোরো ধান কাটার ২০ থেকে ২৫ দিন আগে আউশ বীজতলা তৈরি করতে হয় এবং বোরো ধান কাটার সাথে সাথেই আউশ ধান রোপণ করতে হয়। আবার আউশ ধান কাটার সাথে সাথেই আমন ধান রোপণ করতে হয়। এতে করে একটি জমিতে তিন মৌসুমের ধান উৎপাদন করা হয়। যার ফলে ফসলের শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ একই জমিতে ফসলের উৎপাদন অনেক গুণ বেড়ে যায়।
কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, আউশ শব্দের অর্থ আগাম। বাংলা আশু শব্দ থেকে আউশ শব্দের উৎপত্তি। ১০০ থেকে ১২০ দিনের ভেতর এ ধান ঘরে তোলা যায়। দ্রুত ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের এমন নামকরণ হয়েছে। আউশে আমন–বোরোর মতো যত্ন নিলে বাম্পার ফলন হয়। প্রণোদনা হিসেবে এবার দেয়া ব্রি–ধান–৯৮ এর জীবনকাল ১১২ দিন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই আউশ ধান আবাদ হওয়ায় ফলন আসার পর পাখির উপদ্রব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নেট দিয়ে রক্ষাসহ কৃষকদের এর হাত থেকে রক্ষায় নানা পরামর্শ সহায়তা করা হয়। তবে দিন দিন এই ধানের আবাদ বাড়ায় ভবিষ্যতে এই সমস্যা আর থাকবে না।