মাঠে নামার তোড়জোড় চাষিদের

শুরু হচ্ছে লবণ উৎপাদন মৌসুম

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

বিগত কয়েকবছর উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে বেশ হতাশায় ছিলেন দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের ছয় উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লাখো প্রান্তিক চাষি। সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করায় এই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন তারা। তাই বাপ দাদার পেশা লবণ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন অনেকে। তবে সরকারি কিছু পদক্ষেপের ফলে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন লবণ চাষিরা। যার কারণে চলতি বছর শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগে থেকেই লবণ উৎপাদনে মাঠে নামার তোড়জোড় শুরু হয়েছে কক্সবাজারের মাঠে মাঠে। যেসব চাষির নিজেদের কোনো জমি নেই, তারাও মালিকদের কাছ থেকে আগাম জমি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর যাদের জমি রয়েছে তারাও সেই জমিকে লবণ উৎপাদনের উপযোগী করে তোলার কাজে নেমে পড়েছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী, ডুলহাজারা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী, রামপুরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠ তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন চাষিরা। পশ্চিম বড় ভেওলার বৃহৎ লবণ চাষি দিদারুল করিম দৈনিক আজাদীকে জানান, বিগত পাঁচবছর ধরে প্রতিনিয়ত লোকসান দিয়েছেন প্রান্তিক লবণ চাষিরা। বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার কারণে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বিভিন্ন মহল থেকে লবণ চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে প্রতিবাদসহ নানা কর্মসূচির কারণে শেষপর্যন্ত সরকারের দৃষ্টিগোচর করতে সমর্থ হওয়ায় সরকার দেশীয় লবণ শিল্পনীতি প্রণয়নসহ লবণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে কাজ করেছেন। এতে এবার লবণ উৎপাদনে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দেদার লবণ উৎপাদন হতে পারে। তবে তা সম্পূর্ণই নির্ভর করছে আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দেশে ভোক্তা ও শিল্পখাতের চাহিদার অতিরিক্ত লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আর এটিকে লবণ শিল্পের জন্য সুখবরই বলা চলে।

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের ৬ উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আংশিক এলাকাসহ প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন লাখো প্রান্তিক চাষি। আর এই লবণ শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন প্রায় ৬ লাখ মানুষ। তদ্মধ্যে কেউ সরাসরি লবণ উৎপাদন করেন, কেউ জড়িত থাকেন ব্যবসার সঙ্গে। এছাড়াও অসংখ্য শ্রমিক যুক্ত থাকেন এই লবণ উৎপাদনের কাজে।

বিগত কয়েকবছর লবণ শিল্পের দুঃসময় চলাকালীন জেলার কয়েকজন সংসদ সদস্য দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে জাতীয় লবণনীতি ঘোষণা, ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, মিথ্যা তথ্যে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এলসি খুলে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করায় দেশীয় লবণ শিল্প বারবার মার খাওয়ার বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। এতে সরকার এই বিষয়টি অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে লবণ শিল্পকে বাঁচাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার ফলশ্রুতিতে দেশীয় লবণ শিল্পের আবার সুসময় ফিরে এসেছে। এমনটাই মনে করছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম।
বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এইচ এম শহীদুল্লাহ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে জানান, অনেক দেরিতে হলেও সরকার দেশীয় লবণ শিল্প রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার কারণে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত এক মণ লবণের বিপরীতে প্রায় ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছেন চাষিরা। যা বিগত পাঁচবছরের তুলনায় ভালো দাম ছিল। এবারও মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই প্রান্তিক চাষিরা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন লবণ উৎপাদনে। যা দেশীয় লবণ শিল্পের জন্য একটি ভালো সুখবর।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ইদ্রিস আলী জানান, গতবছরের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ লবণ এখনো মাঠের গর্তে পড়ে রয়েছে। দেশের মিল-কারখানাতেও লবণের মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত। এতে দেশে বর্তমানে কোনো লবণের সংকট নেই। এই অবস্থায় শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে যাওয়ায় লবণ উৎপাদনে চাষিরাও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়ে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধমূল পর্বের আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদায়