মাঠে ঢুকতে কেন বাধা

প্যারেড মাঠের একটা গেট খোলা, বাকিগুলো বন্ধ কিশোর-তরুণরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে দেয়াল টপকে ঢোকে ঘটছে দুর্ঘটনা, গেটগুলো খুলে দেয়ার দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ জুন, ২০২২ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠের সীমানা দেয়াল। সেখানে সুঁচাল লোহার বেড়া। ঝুঁকি নিয়ে বেড়া টপকে প্রতিদিন মাঠে ঢুকে কিশোর-তরুণরা। টপকাতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এর মধ্যে অনেকে আঘাত পেয়েছেন। দক্ষিণ-পূর্ব দিকের সীমানা দেয়ালের পুরোটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেননা এ পথ দিয়ে টপকে মাঠে প্রবেশ করা হয় বেশি।

প্যারেড মাঠে প্রবেশের মোট গেট আছে তিনটি। কেয়ারি শপিং মলের পাশে, জিমনেসিয়ামের পাশে এবং আরেকটি গেট কলেজের ভিতরে। কেয়ারি ও কলেজের ভেতরের গেটটি বন্ধ। জিমনেসিয়ামের পাশের ছোট গেটটি দিয়ে প্রবেশ ও বের হতে হয়। এই অবস্থা চলছে ২০১৩ সাল থেকে। মাঠের প্রবেশপথে অজ্ঞাত কারণে তালা দিয়ে রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ঢুকতে হবে কেন? গেট খোলা না থাকায় শর্টকাট হিসেবে তারা এই ‘ঝুঁকি’ বেছে নেয়। ভুক্তভোগীরা বলছে, সবগুলো গেট খোলা থাকলে এভাবে ‘বাধার কাঁটা’ পার হয়ে মাঠে ঢুকতে হতো না। গত রোববার ডিসি রোডের এক কিশোর এভাবে মাঠে ঢুকতে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। স্থানীয় যুবলীগকর্মী মিনহাজ উদ্দিন মুরাদ জানিয়েছেন, তিনিও এ পথে মাঠে ঢুকতে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন।

জানা গেছে, বছর দেড়েক আগে ১২ বছর বয়সী একজন দেয়ালের সুঁচাল লোহায় আটকা পড়েছিল। পরে লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠান। গত কয়েকদিন সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে। দেখা গেছে, কিশোর-তরুণরা ঝুঁকি নিয়ে সুঁচাল লোহার বেড়া টপকে মাঠে প্রবেশ করছে। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা ডিসি রোড, চন্দনপুরা, কাপাসগোলা বা সিরাজুদ্দৌলা রোড এলাকার বাসিন্দা তারা সীমানা দেয়াল টপকে মাঠে প্রবেশ করে। চাইলে ঘুরে গিয়ে একমাত্র উন্মুক্ত পথটি তারা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সময়ের অপচয় মনে করে অনেকে ঝুঁকি নিচ্ছে। তাদের দাবি, সবগুলো গেট খুলে দেয়া হোক। তাহলে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ঢুকতে হবে না।

সোহেল নামের এক কিশোর বলে, মাঠে প্রবেশের কয়েকটা গেট রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া বাকিগুলো তালাবদ্ধ। আমরা যে পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে প্রবেশ করি সেখানেও একটি গেট রয়েছে। কখনো সেটি খুলতে দেখিনি।

কিশোর ও তরুণদের পাশাপাশি যারা মাঠে সকাল-বিকাল হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে আসেন তারাও মাঠে প্রবেশের গেটগুলো বন্ধ রাখার বিপক্ষে।

গত রোববার প্রাতঃভ্রমণে আসা সাবেক সরকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন মাঠে আসি। হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরে যাই। দেয়াল টপকে ছেলেদের মাঠে প্রবেশের দৃশ্যটি প্রায় সময় চোখে পড়ে। দু’একবার বারণও করেছিলাম। কিন্তু কথা শুনে না। দেয়ালে থাকা লোহার উপর বিশেষ ধরনের লোহার পাইপ বসিয়ে সেটার উপর দিয়ে তারা মাঠে প্রবেশ করে। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ‘আঠারো’র তারুণ্য রুখবে কে? তাদের কথা আমাদের চিন্তা করতে হবে।মাঠের গেটগুলো খুলে দেয়া প্রয়োজন।

মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত রয়েছে সারি সারি অনেকগুলো টং দোকান। কেয়ারি শপিং মলও আছে। এক পাশে রয়েছে পাঁচ-দশটা স্টিলের আলমারির দোকান। ঝুঁকিপূর্ণ পথটি এসব দোকানের সামনেই। মাঠে প্রবেশের গেটগুলো খুলে দেয়া হোক-এমন দাবি তাদেরও।

মো. সালেহ নামের এক দোকানদার বলেন, এ পথে অনেক ছেলে মাঠে প্রবেশ করে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একজনের কাছ থেকে দেখে অন্যজনও এ পথে মাঠে প্রবেশ করছে। ছোটখাট দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। বছর দেড়েক আগে এক কিশোর গুরুতর আহত হয়েছিল বলে জানান তিনি।

যুবলীগ কর্মী মিনহাজ উদ্দিন মুরাদ বলেন, মাঠের চারপাশসহ কলেজে একসময় ছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। তারা এ এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছে। দেশ বিরোধী কাজ করেছে। তবে তাদের টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। কলেজ ছাত্রলীগসহ আমাদের ন্যায়সঙ্গত অবস্থানের ফলে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। গেটগুলো কখনো খোলা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গেটগুলো খুলে দিলে ভালো হয়। গেট বন্ধ থাকুক তা আমরা চাই না।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, গেট খোলা থাকুক, বন্ধ থাকুক তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কলেজের নিরাপত্তার বিষয়টি অটুট রেখে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটিকে সাপোর্ট করব।

১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু বলেন, শুরুর দিকে কয়েকবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সবগুলো গেট উন্মুক্ত করা হয়েছিল। পরে প্রশাসন গেটগুলো বন্ধ করে দেয়। গেটগুলো যাতে খুলে দেওয়া হয় সেজন্য আমার চেষ্টা ছিল, থাকবে।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম কলেজের উত্তর পাশের বিশাল খালি ময়দানটিতে গোরা বাহিনী প্যারেড বা কুচকাওয়াজ করত। পরবর্তী সময়ে মাঠটি প্যারেড ময়দান নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে মাঠটিকে ঘিরে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে, সীমানা দেয়ালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। খেলাধুলা এবং প্রাতঃভ্রমণের জন্য মাঠটি প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে মাঠে কোনো সভা-সমাবেশ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চাইলে কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিতে হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূমি নিয়ে সক্রিয় জালিয়াত চক্র
পরবর্তী নিবন্ধখলিফাপট্টিতে যুবককে ছুরিকাঘাত আটক ১