চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অযত্নে অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে নিঃশেষের প্রহর গুণছে এক অর্ধ শতবর্ষী ডাকঘর।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরখাইনে মাটি আর ধানের তুষের তৈরি দেয়াল আর টিনের চৌচালা এই ডাকঘর (কোড ৪৩৭৬) অযত্ন আর অবহেলায় দাড়িয়ে রয়েছে বেহাল অবস্থায়। দীর্ঘদিন ধরে কোন সংস্কার ও উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় জরাজীর্ণ রূপ ধারণ করেছে ডাক অফিসটি। ডাক যুগের অতি ব্যাস্ত এই ডাক অফিসটি যেন এখন এক ভূতুরে ঘর। ৫২ বছর পূর্বের ডাকঘরটি যেন স্বাক্ষ্য বহন করে আছে কত শত ইতিহাসের।
ঘরটির পশ্চিম দেয়ালে ঝুলে আছে লাল রঙের ‘চিঠির বাক্স’। কিছুটা বিবর্ণ বাক্সটিতে ধুলোও জমেছে বেশ। পাশেই প্রায় জং ধরা একটি লোহার পাতে লেখা ‘তৈলারদ্বীপ পোস্ট ই-সেন্টার’।
প্রতিদিন পটিয়া থেকে এখানে চিঠি নিয়ে আসেন রানার। ৬ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত চিঠি বিলি হয় এই ডাকঘর থেকে। ৪ ফিট বাই ৪ ফিট আয়তনের একটি কক্ষেই চলে দাপ্তরিক কাজ। আছেন দুজন কর্মচারী।
ই-পোস্ট সেন্টারের ব্রাঞ্চ পোস্টমাস্টার পদে গত ৪ বছর ধরে দায়িত্বে আছেন মোহাম্মদ আমির হোসেন। আর চিঠি বিলিকারক হিসেবে আছেন মিজানুর রহমান।
রবিবার (৪ মে) তৈলারদ্বীপ পোস্টমাস্টার মোহাম্মদ আমির হোসেন এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “৫২ বছরের পুরোনো এই ডাকঘর। কাগজে-কলমে এ জায়গার মালিক সাবেক এমপি সারওয়ার জামাল নিজামের পরিবার। তারা মৌখিকভাবে ডাকঘরের জন্য এ ঘরটি ব্যবহার করতে দিয়েছে। পটিয়া ডাকঘরের অধীনে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, “এখন আর আগের মতো ব্যক্তিগত চিঠি কেউ পাঠায় না। সরকারি আর চাকরির চিঠিই থাকে প্রতিদিন।”
২০১৭ সালে ই-পোস্ট সেন্টার করা হয় এ ডাকঘরকে। কিন্তু এখানে ই-পোস্ট সেন্টারের কার্যক্রম নেই। কম্পিউটার-প্রিন্টার বরাদ্দ দেয়া হলেও তা এখনও পটিয়া ডাকঘরে পড়ে আছে। মাটির ডাকঘর হিসেবে এর আলাদা পরিচিতি ও আকর্ষণ রয়েছে। তবে দুঃখেরও শেষ নেই।
‘ঘরটির দরজা-জানালাগুলো ঘুণে ধরেছে। সংস্কারের অভাবে নাজেহাল অবস্থা। এই এলাকায় মাটির ঘর থাকলেও, নেই মাটির কোনো সরকারি অফিস। বলা চলে পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাটির এমন ডাকঘর দ্বিতীয়টি আর নেই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। কেবল প্রতি মাসে ১৫ টাকা অফিস খরচ মেলে। তাও চলে যায় কলম আর কাগজ কিনতে।’
স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী আতিকুল হামিম বলেন, “বর্তমানে সারা দেশে একযোগে যখন সরকার সকল ডাকঘরকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় এনে স্মার্ট করে তুলছে, তখন এই পুরোনো প্রাচীন ডাকঘরটিকে রক্ষার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান৷”
এ ব্যপারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেপুটি পোস্টমাস্টার শরীফ মোঃ সাইফুল্লাহ বলেন, “তৈলারদ্বীপ এই পোস্ট সেন্টার নিয়ে আমরা অবগত আছি এবং খুব দ্রুতই একটা ব্যবস্থা করা হবে।”