মাঝ আকাশে রুদ্ধশ্বাস ৭৫ মিনিট

ল্যান্ডিং গিয়ারে ক্রটি, শাহ আমানতে বিমানের জরুরি অবতরণ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট (৭৫ মিনিট) মাঝ আকাশে চক্কর দেয়ার পর অবশেষে ভালোয় ভালোয় জরুরি অবতরণ করেছে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট। ৪২ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে আসা ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের আকাশে দীর্ঘ সময় চক্কর দেয়ার পর অবশেষে অবতরণ করে। এই সময় যাত্রীদের মাঝে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফ্লাইটের ভেতরে কান্নার রোল উঠে। তবে পাইলট অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণে সক্ষম হন।
এতে বিমানের সামনের চাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৬১৭ নম্বর ফ্লাইটটি গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় ঢাকা থেকে যাত্রা করার কথা ছিল। এটি ৩০ মিনিট বিলম্বে রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে মিনিটে যাত্রা করে। রাত ৮-২০ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে দেখা যায় যে সামনের চাকা নামছে না। নোজ হুইল না নামার ফলে বিমানটি অবতরণ অসম্ভব হয়ে উঠে। এই সময় পাইলট বিমানটিকে নিয়ে আবারো আকাশে উঠে যান। এরপর এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিনি দফায় দফায় চেষ্টা করেছেন। নোজ হুইল নামানোর চেষ্টার প্রভাব বিমানের ভেতরেও টের পাচ্ছিলেন যাত্রীরা।
বিমানের একাধিক যাত্রী বলেছেন, পাইলট যখন নোজ হুইল নামানোর গিয়ার ধরে টানাটানি করছিলেন তখন বিমানের ভিতরে তীব্র ঝাঁকুনি তৈরি হচ্ছিল। বিমানের ভেতরে ৪২জন যাত্রীর অধিকাংশই সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে জোরে জোরে চিৎকার এবং কান্নাকাটি করছিলেন। রুদ্ধশ্বাস এক ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছিল ফ্লাইটে। এই সময়ের মধ্যে পাইলট ৪ থেকে ৫ বার ফ্লাইটটি অবতরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছিলেন। অবশেষে সর্বশক্তি দিয়ে তিনি নোজ হুইল গিয়ার নামানোর চেষ্টা করেন এবং সফল হন। অবশেষে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে বিমানটির জরুরি অবতরণ করাতে সক্ষম হন। বিমানটি অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ার মতো রানওয়েতে পড়ে এবং অল্প কিছুদূর গিয়ে রানওয়ের মাঝখানে থেমে যায়। এতে বিমানের চাকা পুরোপুরি বাঁকা হয়ে যায়। যাত্রীদের নিরাপদে নামিয়ে আনার পর বিমানের চাকা মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। এই মেরামত কাজ শেষ হতে সময় লাগবে বলে রাতে শেষ খবরে জানা যায়।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের নোজ হুইল না নামার খবরে শুধু বিমানের ভেতরেই নয়, বিমানবন্দরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কন্ট্রোল টাওয়ারের মাধ্যমে খবর পাওয়ার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি অবতরণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ফায়ার সার্ভিস এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রাসঙ্গিক সব কিছুর যোগাড় করে রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট বিমানবন্দরে অবস্থান নিয়েছিল। তবে ভালোয় ভালোয় বিমানটি অবতরণ করায় সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের সহকারী ম্যানেজার ওমর ফারুক জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটির ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তাই সেটি জরুরি অবতরণ করেছে। এতে যাত্রীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি
পরবর্তী নিবন্ধদেশে শনাক্তের হার বেড়েছে মৃত্যু ২