চট্টগ্রাম–রাঙামাটি মহাসড়কের পাশে রাউজান পৌরসদরের আচার্য্য পাড়ার (পাইপেরগোরা) উত্তরে একটি প্রাচীন পুকুর ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়রা উদ্বেগ–উৎকন্ঠা প্রকাশ করে বলেছেন, একে একে পুকুর জলাশয় ভরাট করে ফেলার কারণের প্রাকৃতিক পানির উৎস হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গ্রাম বাংলার প্রাচীন নিদর্শন চিরতরে মুছে যাচ্ছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, মহাসড়কের পাশের যে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে সেটি যৌথ মালিকানার পুকুর। নুরুল আবসার নামের এক ব্যক্তি পুকুরের কিছু অংশ কিনে পুকুরটির ভিতর পাকা ও বেড়ার ঘেরা দিয়ে তার অংশে বালু ফেলে ভরাট করার কাজ করছেন। পুকুর ভরাট করা প্রসঙ্গে কথা বললে কাজের তদারকিতে থাকা নুরুল আবসার দাবি করেন, পুকুরটি বহু আগে ভরাট করা হয়েছে। এখন তিনি ভিতরে গার্ড ওয়াল দিচ্ছেন।
পৌরসদরের বাসিন্দারা বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাউজানের ঐতিহ্যবাহী ফকিরহাটের ভিতর থাকা তিনটি পুকুর ভরাট করে স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে। সেসব জায়গায় এখন গড়ে উঠেছে বড় বড় মার্কেট–শপিং মল।
রাউজান পরিবেশ দূষণ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এম এন আবসার বলেছেন, দক্ষিণ রাউজানের আধুনিক বাণিজ্য কেন্দ্র নোয়াপাড়া পথেরহাট। সেখানেও পুকুর জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় বাণিজ্য কেন্দ্র। পরিবেশবাদিরা বলেছেন, দেশে প্রতিদিন পানির সংকট বাড়ছে। গ্রামীণ নলকূপগুলোতে এখন ঠিকমত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক পানির জন্য সব এলাকার মানুষের মধ্যে হাহাকার রয়েছে। পানি না পাওয়ার কারণে বিভিন্নস্থানে চাষাবাদও ব্যাহত হচ্ছে। অনেক জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে যথাসময়ে পৌঁছালেও পানির উৎস না পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাংঘাতিকভাবে বেগ পেতে হচ্ছে। তারা মনে করেন পুকুর জলাশয় ভরাট করার আগে পরবর্তী সংকট নিয়ে সকলের ভাবা উচিত।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পিযুষ প্রভাকর বলেন, পুকুর জলাশয় ভরাট করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। তার দেয়া তথ্যানুসারে, রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ছোট–বড় পুকুরের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪০৩টি। তবে এলাকার মানুষ মৎস্য বিভাগের এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেছেন, বর্তমান পুকুর জলাশয়ের সংখ্যা অনেক কম।
পৌর সদরে রাঙামাটি মহাসড়কের কিনারায় পুকুর ভরাট নিয়ে কথা বললে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, পুকুর ভরাট করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। কারা পুকুর ভরাট করছেন তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন বলে জানান।