মাছে ভরপুর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র

পরিমাণ কম ইলিশের, দামও কমেনি

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | শুক্রবার , ২৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বৈরি আবহাওয়া কেটে যাওয়ার পর সাগরে নির্বিঘ্নে মাছ ধরছে জেলেরা। পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে নানা প্রজাতির মাছ। এতে সাগর থেকে ঘাট পর্যন্ত জেলেদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। মাছে ভরপুর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ অন্যান্য মৎস্য কেন্দ্রগুলো গম গম করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কক্সবাজার মৎস্য কেন্দ্রে দেখা যায়, পুরো মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রজুড়ে মাছ আর মাছ। বিক্রির জন্য তোলা বিভিন্ন প্রজাতির মাছে সয়লাব হয়ে গেছে পুরো কেন্দ্র। ইলিশ, রিটা, সুরমা, পোঁপা, কোরাল, ফাইস্যা, ছুরি, চিংড়ি, কামিলা, ফাইস্যাসহ আরো নানা প্রজাতির মাছ বিক্রির জন্য তুলেছেন জেলেরা। তবে ইলিশের পরিমাণ কম। বিপুল মাছ ধরা পড়লেও দাম বাড়তি।

মৎস্য ব্যবসায়ী হামিদুল হক জানান, বৈরি আবহাওয়া কেটে যাওয়ার পর থেকে সাগরে জেলেদের জালে ব্যাপক মাছ ধরা পড়ছে। এতে জেলে, বোট মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ সকলের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। আহরিত মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করছে ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার মূল সময় হলেও চলতি মৌসুমে তা ব্যতিক্রম হয়েছে। কেননা, মৌসুমের শুরু থেকে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করায় সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেনি জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার পর গত দুই মাসের মধ্যে ২০ দিনও স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরতে পারেনি তারা। এতে সংশ্লিষ্ট সবাই হতাশ হয়ে পড়েন। অবশেষে মাছ আহরণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবার আনন্দিত।

ফিশারি ঘাটে কথা হলে বোট মাঝি আলিম উদ্দীন বলেন, গত ১০ দিন মতো সাগর মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে। বোটগুলো অনেক গভীরে গিয়ে মাছ আহরণ করতে পারছে। জালে মাছও ভালো ধরা পড়ছে। ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে। সব বোট অনেকটা বোট বোঝাই করে কূলে ফিরছে। এমন পরিস্থিতি বলবৎ থাকলে জেলেরা কিছুটা হলেও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে। বোট মালিক আশরাফুল হক বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে এই বর্ষা মৌসুমে অপূরণীয় লোকসান হয়েছে বোট মালিকদের। সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরও মাসের বেশি সময় মাছ পাওয়া যায়নি। যার কারণে ঋণ করে খরচ চালাতে হয়েছে। এখন কিছুটা মাছ ধরা পড়ছে। এতে অন্তত খরচ উঠলে আমরা অনেকটা প্রাণে বাঁচি।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক কারণে সাগরে মাছ কমে গেছে। ১০ বছর আগের তুলনায় মাছ আহরণের পরিমাণ কয়েকগুণ কমেছে। তার উপর বৈরি আবহাওয়া মৎস্য আহরণ ব্যবসাকে বেশ ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এই মৌসুমে যে লোকসান হয়েছে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। বর্তমানে যে কিছুটা মৎস্য আহরণ বেড়েছে তা সান্ত্বনা মাত্র। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সহকারী হিসাব নিয়ন্ত্রক আশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, মৎস্য আহরণ বেড়েছে, তবে ইলিশ আহরণ আশানুরূপ দেখা যাচ্ছে না। আহরিত মৎস্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করছে ব্যবসায়ী। কিন্তু তুলনামূলক বাড়তি রয়েছে। মৎস্য আহরণ বাড়ায় সরকারি রাজস্ব আয়ও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর জেলায় মাছ ধরা পড়েছিল হয়েছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ইলিশ ছিল ৩৫ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। চলতি বছর ৩৬ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে বৈরি পরিবেশের কারণে সাগরে দীর্ঘ সময় ট্রলার নামতে না পারায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে ভবনের ছাদে ঝুলছিল যুবকের মরদেহ
পরবর্তী নিবন্ধওয়াটারপ্রুফিং পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত