‘মাছের স্কুল’ রাতারাতি বদলে দেয় জেলেদের ভাগ্য

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | শনিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে রয়েছে মাছের স্কুল (মাছের ঝাঁক)। এককেটি স্কুলে থাকে কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ পর্যন্ত মাছ। আর এই ধরনের একটি মাছের স্কুল ধরা পড়লেই রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় জেলেবহদ্দারদের।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৪৭০ প্রজাতির মাছ শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে কিছু প্রজাতির মাছ একাকী এবং কিছু প্রজাতির মাছ দলবদ্ধ বা ঝাঁকে ঝাঁকে চলাফেরা করতে পছন্দ করে। এই ধরনের একেকটি দলে কয়েকশ থেকে কয়েক লাখ পর্যন্ত মাছ থাকতে পারে। আর এই মাছের দলকে বলা হয় ‘স্কুল অব ফিশ’ বা মাছের স্কুল।

তিনি জানান, সাগরে ইলিশ, পোয়া, কোরাল, লাক্ষ্যা, পাঙ্গাস, বাটা, চামিলা, ছুরি, চিংড়িসহ আরও কিছু প্রজাতির মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে চলাফেরা করে। তবে পোয়া, কোরাল, লাক্ষ্যা, পাঙ্গাস কিংবা ইলিশ মাছের একটি ‘স্কুল’ ধরা পড়লেই রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় জেলেবহদ্দারদের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ওয়াহিদুল আলম জানান, বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে মাঝেমধ্যেই বড় বড় ‘স্কুল’ ধরা পড়ে। এমনকি একবার জাল ফেলে উঠে আসতে পারে কোটি টাকার মাছও। তিনি জানান, গত ১১ জানুয়ারি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এক জেলের জালে ধড়া পড়ে ৯২ মণ ইলিশ। গত বছর ১৯ আগস্ট কক্সবাজার উপকূলের অদূরে একটি ট্রলারে ১৬০ মণ ওজনের ৫২ লাখ টাকার ইলিশ ধরা পড়ে। ২৬ আগস্ট পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এক জেলের জালে ১৭০ মণ ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। একই বছরের ১৪ আগস্ট নোয়াখালীর একটি ট্রলারে ৯৬ মণ ইলিশ ধরা পড়ে। ৫ সেপ্টেম্বর বরগুনার পাথরঘাটার একটি ট্রলারে ৩০ মণ ইলিশসহ ৫০ মণ মাছ ধরা পড়ে। গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিমে প্রায় ৮০ কিলোমিটার গভীর সাগরে জাল ফেলে কক্সবাজারের এক জেলে ৬ হাজার ১২২টি ইলিশ মাছ পান। তাছাড়া গত বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগরে পিরোজপুর জেলার এক জেলের জালে ৯০টি লাক্ষ্যা মাছ ধরা পড়ে। গত ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালীর উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরে এক জালে ধরা পড়ে ৬ থেকে ১০ কেজি ওজনের ১৫৯টি কালো পোয়া। মাছগুলো কূলে আনার পর ২ কোটি টাকা দাম হাঁকানো হলেও পরে চট্টগ্রাম শহরে এ মাছগুলো ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এর আগে ৯ অক্টোবর সেন্টমার্টিনের উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরে এক ট্রলারে ১১৫ কেজি ওজনের ১০টি পোয়া মাছ ধরা পড়ে। ৫ নভেম্বর হাতিয়ার মেঘনা নদী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলারে ৩০০টি বড় আকারের সাগরের পাঙ্গাশ মাছ ধরা পড়ে। এসব মাছ নিলামে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।

২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরের ১০ বাইন এলাকায় জাল ফেলে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের একটি ট্রলারে ১৫০টি (১৭ মণ) লাল কোরাল মাছ ধরা পড়ে। মাছগুলোর একেকটির ওজন সাড়ে ৪৫ কেজি। একই বছরের ২২ আগস্ট শাহপরীর দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এক জালে ২০০টি লাল কোরাল মাছ ধরা পড়ে। যেগুলোর ওজন সাড়ে তিন কেজি থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর টেকনাফের জাহাজপুরা উপকূলে স্থানীয় এক জেলের টানা জালে ৯০টি লাল কোরাল মাছ ধরা পড়ে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, ভবিষ্যতে জেলেরা যাতে স্যাটেলাইটে এই ধরনের মাছের স্কুলের বিচরণ দেখে মাছ ধরতে যেতে পারে, তারজন্য এই প্রতিষ্ঠানে ওশান অবজার্ভেশন সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। বর্তমানে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের ইচ্ছে পূরণ হলো না
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬