মাছের পুষ্টিগুণ ঠেকাবে হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | শনিবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

মাছের পুষ্টিগুণ ঠেকাবে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, জ্বালাপোড়া ও মস্তিষ্কের দুর্বলতাসহ শারীরিক নানা অসঙ্গতি। তবে ভোক্তাদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে মাছের উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রাসায়নিকমুক্ত ‘কোল্ড চেইন’ বা ‘ঠান্ডা শৃঙ্খল’ বজায় রাখা অপরিহার্য বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।

গত শুক্রবার কক্সবাজারস্থ মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রে আয়োজিত এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাছের উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রাসায়নিকমুক্ত কোল্ড চেইন বজায় রাখা হলে মাছের গুণগত পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন থাকে। তাজা ও সঠিকভাবে সংরক্ষিত মাছের প্রোটিন, ভিটামিনডি, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলো নষ্ট হয় না। রাসায়নিকমুক্ত ও সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষিত মাছ ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস বা দূষণজনিত রোগ ছড়ায় না। টাইফয়েড, ডায়রিয়া, খাদ্যজনিত বিষক্রিয়া ইত্যাদি ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। তাজা মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডসহ অন্যান্য ঔষধি উপাদানগুলো হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, জ্বালাপোড়া ও মস্তিষ্কের দুর্বলতাসহ বহু জটিল রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহা জেসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র প্রধান ড. আশরাফুল হক এবং মূল আলোচক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন। কর্মশালায় বিএফআরআই ও হ্যাচারির মৎস্য বিজ্ঞানী, মৎস্য শিকারী, উৎপাদনকারী এবং ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

কর্মশালার মূল আলোচক ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, দেশে দৈনিক প্রোটিন চাহিদার একটি বড় অংশ আসে মাছ থেকে। নিরাপদ মাছ উচ্চমানের প্রোটিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম ও প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে; যা শিশু, গর্ভবতী নারী, কিশোরকিশোরী ও বয়স্কদের পুষ্টি উন্নয়নে বিশেষভাবে সহায়ক। তিনি বলেন, ভোক্তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা বজায় রাখা অপরিহার্য। নিরাপদ মাছ শুধু সুস্বাস্থ্যই দেয় না, বরং খাদ্যবাহিত রোগ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে। আমরা সঠিকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারলে বাংলাদেশ পুষ্টি নিরাপত্তায় আরও এগিয়ে যাবে। সুস্থ সবল জাতি গঠনের জন্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ মাছের বাজারে ভোক্তার আস্থা বাড়ে এবং উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরাও লাভবান হয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এর ফলে সুশৃক্সখল বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠে। পুষ্টি নিশ্চিতকরণে কিছু অপরিহার্য শর্ত পালনের উপর গুরত্বারোপ করেন অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন বলেন, দূষণমুক্ত উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ, পুকুর/সমুদ্রের পানির মান নিয়ন্ত্রণ, মানসম্মত মৎস্য খাদ্যের ব্যবহার, নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধের মাধ্যমে নিরাপদ মাছ উৎপাদন করতে হবে। সেই মাছ ফরমালিন, অ্যামোনিয়া বা অন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই কেবল বরফ ও শীতলীকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংরক্ষণ ও পরিবহণ করতে হবে। মাছের পুষ্টিমান ধরে রাখার জন্য ‘উৎপাদন থেকে ভোক্তা’ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রাসায়নিকমুক্ত কোল্ড চেইন বা ০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখার উপর গুরুত্বারোপ করে ড. ইয়ামিন বলেন, শৃক্সখল ভাঙলে মাছ দ্রুত নষ্ট হয়।

সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ ও ল্যাব পরীক্ষা, নিয়মিত মনিটরিং, সার্টিফিকেশন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভোক্তার পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, তাজা মাছ চিনে রাখা, সন্দেহজনক মাছ এড়িয়ে চলাসহ এ বিষয়ে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাংবাদিকদের পাশে থাকবে সরকার : ন্যায়বিচারের আশ্বাস
পরবর্তী নিবন্ধআইনজীবী আলিফ হত্যার আসামি সুকান্ত গ্রেপ্তার