সীতাকুণ্ড উপজেলায় সৈয়দপুর ইউনিয়নের বসরতনগর গ্রাম। এখানে একটি ক্ষেতের গাছে থোকায় থোকায় হলুদ চায়না তরমুজ ঝুলছে। জালে সেগুলো সযত্নে ঘিরে রেখেছেন কৃষক। এ এলাকায় আগে হলুদ রঙের তরমুজের চাষ হয়নি। প্রথমবারের মতো চায়নিজ জাতের ব্ল্যাকবেবি, ইয়েলো বার্ড ও বাংলালিংক এ তিন জাতের তরমুজের চাষ হচ্ছে। আকারে ছোট, খেতে সুস্বাধু এ জাতের তরমুজের গায়ের রং কালো হওয়ায় ‘ব্ল্যাকবেবি’। আরেকটি হলুদ রঙের হওয়ায় ইয়েলো বার্ড হিসেবে পরিচিত। ওই এলাকার জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক ৫৪ শতক জমিতে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয়ে এই তিন জাতের তরমুজের চাষ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাচাংয়ের নিচে সারি সারি হলুদ রঙের তরমুজ ঝুলে আছে। পাশে পলিথিন দিয়ে তরমুজের বীজ বপনের জন্য বেড তৈরি করা হয়েছে। বাঁশ ও জিআই তারে তৈরি ঝাংলায় তরমুজ গাছের সবুজ পাতাগুলো শোভা বর্ধন করছে। হলুদ রঙের এই তরমুজ এ এলাকায় আর কখনো চাষ হয়নি। আকারে আরেকটু বড় হলেই তরমুজগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করলে লাভবান হবেন কৃষকরা। কিন্তু গ্রীষ্মের দাবদাহের ক্ষেতটি ফেটে চৌচির। তাই শঙ্কায় তরমুজ চাষিরা।
তরমুজ চাষি জসিম উদ্দিন বলেন, জয়পুরহাট জেলায় এ জাতের তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছে। সেখান থেকেই বীজ এনে প্রথমে ৫৪ শতক জমিতে চাষ করা শুরু করি। আমরা চারজন মিলে সৈয়দপুর ইউনিয়নের বশতনগর গ্রামে চায়না তরমুজ বপনের সিদ্ধান্ত নিই। জয়পুরহাট থেকে তরমুজের তিন প্রজাতির বীজ নিয়ে আসি। বীজগুলো এনে চারা উৎপাদনের জন্য ঘরে ট্রেতে রাখা হয়। এরপর জমি তৈরির কাজ শুরু করি। জমিতে গোবর সার, টিএসপি, ড্যাপ সার ও জিপসাম দিয়ে জমি ভালোভাবে চাষ দিই। তারপর আড়ি তৈরি করা হয়। এরপর জয়পুরহাট থেকে মালচিং পেপার এনে আড়িগুলোর উপর দেওয়া হয়। এর মধ্যে বীজ থেকে চারা উঠে যায়। চারাগুলো কিছু দূর পরপর মালচিং পেপার ছিদ্র করে লাগানো হয়। পরবর্তীতে জমিতে পানির অভাব দেখা দেয়। অনেক দূর থেকে পানি এনে ২০-২৫ ঘণ্টা জমি সেচ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গাছের লতা আসা শুরু করলে মাচাং তৈরি করা হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় অতিরিক্ত গরমের ফলে পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। তারপর আশপাশের পুকুর, ছড়া, ডোবা থেকে পানি এনে চারাগাছগুলোতে দেওয়া হয়। পানির অভাবে ফলগুলো শুকিয়ে ঝরে যেতে শুরু করে। আমরা বারোমাসি তিন প্রজাতির তরমুজ চাষ করেছি। একেকটি ফল দুই থেকে তিন কেজি হয়। কিন্তু পানির কারণে তরমুজগুলো আধা কেজি-এক কেজি থেকে বড় হচ্ছে না। আমাদের প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লোকসান হয়ে যাচ্ছে। কারেন্ট না থাকায় পানির মোটরও বসানো যাচ্ছে না।
আরেক কৃষক মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে প্রথম এইরকম তরমুজের চাষ করেছি। মাচাং পদ্ধতি হওয়ায় বৃষ্টি হলেও কোনো সমস্যা নেই। এক বছরের মধ্যে তিনবার চাষ করা যায়। ৬৫ দিনের মধ্যে ফল আসে। তিনি বলেন, যা কয়েকটা ফল আছে তা কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হবে। তিনি আশা করছেন কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। তারও আক্ষেপ, তরমুজ ক্ষেতে পানি দিতে পারলে অনেক লাভবান হতেন।
সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, হলুদ তরমুজ চাষের কথা তিনি জানেন না। তবে এখানে একসময় অন্য প্রজাতির তরমুজ চাষ হতো। পানি সংকটের কারণে সেসব চাষ বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রঘুনাথ নাহা বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। এখন খোঁজ নেব। যত রকম সাহায্য সহযোগিতা করা দরকার আমরা করব।