বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাড়ির ডিপ ফ্রিজ থেকে লাশ উদ্ধার করা নারীকে তার ছেলেই হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাবের দাবি, হাত খরচের টাকা এবং প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মনোমালিন্যের জেরেই মাকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে বন্দী করে ছেলেটি। প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন প্রমাণের ভিত্তিতে গত সোমবার রাত ১২টার দিকে ছেলেকে আটকের পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে র্যাব–১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গ্রেপ্তার সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯) দুপচাঁচিয়ার দারুসসুন্নাহ কামিল মাদরাসার ছাত্র এবং ওই মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল ও উপজেলা মসজিদের খতিব আজিজুর রহমানের ছোট ছেলে। খবর বিডিনিউজের।
গত রোববার দুপুরে আজিজুর রহমানের স্ত্রী উম্মে সালমা খাতুনের (৫০) লাশ বাড়িতে থাকা ডিপ ফ্রিজের ভিতরে পাওয়া যায়। উপজেলা সদরের জয়পুরপাড়া এলাকায় ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’ নামে বাড়িটির আলমারি ভাঙা ও জিনিসপত্র এলোমেলো করে রাখা ছিল। আজিজুর রহমান ও সালমা খাতুন দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় দুই ছেলে–মেয়ে ঢাকায় থাকেন। খতিব আজিজুর রহমান স্থানীয়ভাবে সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় তার বাড়িতে এমন ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের মাঝে ডাকাতির আতঙ্ক চলে আসে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে র্যাব–১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে র্যাব জানতে পারে, সালমা খাতুনের সঙ্গে তার ছেলে সাদের হাত খরচের টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া বিবাদ চলছিল এবং বাসা থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৫০০–১০০০ টাকা হারিয়ে যেত। ঘটনার দিন সকালেও হাত খরচের টাকা নিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডা হয় সাদের। পরে সে রাগ করে সকালের নাস্তা না খেয়ে মাদরাসায় চলে যায়।
এসব বিষয় মাথায় রেখে হত্যাকারীর অনুসন্ধান চালানো হয় বলে মেজর এহতেশামুল জানান। তিনি বলেন, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ে হত্যাকাণ্ডের আনুমানিক সময় মা ও ছেলের অবস্থান একই জায়গায় ছিল। আবার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ওই দিন নিহতের ছেলে ছাড়া সন্দেহভাজন কাউকে দেখা যায়নি। পরে সোমবার রাতে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার পাঁচ পীর আড়োবাড়ী এলাকায় সাদের দাদাবাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে সাদ নিজের মাকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে বলে জানান র্যাব কমান্ডার। তিনি বলেন, একটি প্রেমের সম্পর্ক নিয়েও মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল সাদের। আর সম্ভবত জুয়া খেলায় সে জড়িয়ে পড়ে। এ জন্য সে টাকা নিয়ে প্রতিদিন বাড়িতে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করত।
হত্যার দিনের ঘটনার বর্ণনায় র্যাব কর্মকর্তা এহতেশামুল বলেন, রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মাদরাসায় বিরতির সময় সাদ বাসার এসে তার মা সালমাকে তরকারি কাটতে দেখে। ওই সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পিছন দিক থেকে মায়ের নাক–মুখ চেপে ধরে সাদ। এক পর্যায়ে তার মা বাঁচার চেষ্টায় ধস্তাধস্তি করতে থাকলে তরকারি কাটার বটি লেগে সাদের হাতের তর্জনী আঙ্গুলের নিচে হালকা কেটে যায়। তবুও সে মায়ের মুখ চেপে রেখে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর সাদ মায়ের দুই হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে লাশ বাসায় থাকা ডিপ ফ্রিজের ভিতর রেখে দেয়। এবং ঘটনাটি ডাকাতি হিসেবে সাজানোর জন্য বাসায় থাকা কুড়াল দিয়ে আলমারিতে কয়েকটি কোপ দেয় ও জিনিসপত্র এলোমেলো করে রাখে। পরে বাসার মেইন গেইটে তালা দিয়ে বের হয়ে যায় সে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে বাবাকে জানায়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে দুপচাঁচিয়া থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, উম্মে সালমাকে হত্যার ঘটনায় তার বড় ছেলে নাজমুস সাকিব অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা করেছিলেন। এ ঘটনায় ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তবে তাকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলেই তাকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান ওসি।