মাকে ভালোবাসি প্রতিদিন

বিশ্ব মা দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ মে, ২০২২ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

‘আমার পিঠের ঠিক মাঝখানে সর্বক্ষণ আমি/ অশ্রুজলে-ভেজা দুটি চোখ টের পাই-/ চোখ দু’টি আমার মায়ের;/ যখন যেখানে যাই যুদ্ধ ও শান্তিতে-/ নগরে-বন্দরে-গ্রামে শত্রু বা মিত্রের ঠিকানায়/ উদ্বেগে আকুল, সিক্ত ঐ দু’টি চোখ/ আমাকে আগলে রাখে, চোখে-চোখে রাখে!’

সন্তানকে প্রতি মুহূর্তে পরম মমতায় আগলে রাখেন মা। সন্তানের নিরাপত্তা, আশ্রয় ও ভবিষ্যত নিয়ে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন মা। কবি রফিক আজাদের ‘আমার মায়ের চোখ’ শিরোনামে কবিতায় ফুঠে উঠেছে এ সত্য। তার ভাষায়- ‘সন্তানের জন্যে কাঁদে অহোরাত্র মায়ের হৃদয়; সন্তানের মঙ্গলের জন্যে আর্দ্র, ব্যথিত দু’চোখে, শূন্যে দুই হাত তুলে মোনাজাত করে পাঁচবেলা!’।

মা। পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর শব্দ। ‘হেরিলে মায়ের মুখ/ মুছে যায় সব দুঃখ’। মায়ের মুখের হাসির দিকে তাকিয়ে নিমিষেই সব দুঃখ-বেদনা ভুলে যায় সন্তান। শুধু মানবজাতি না। পুরো প্রাণী জগতে মা মমতা ও ভরসার পরম অরাধ্য নাম। মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানোর নির্দিষ্ট কোনো সময় কিংবা দিনক্ষণের প্রয়োজন হয় না। মাকে ভালোবাসতে হয় প্রতিক্ষণ। হৃদয়ের মণিকোঠায় প্রতিমুহূর্তে মায়ের জন্য থাকে শ্রদ্ধা। তবুও মার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে সন্তান। মাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস হবে। ফেলে আসা জীবনে মুখ ফোটে বলতে না পারা সন্তান হয়তো সংকোচ দূর করে আজ বলে উঠবে, মা আমি তোমাকে ভালোবাসি। কারণ আজ বিশ্ব মা দিবস। আজ মায়ের জন্য হৃদয়ের গভীরে পুঞ্জীভূত ভালোবাসার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটানোর দিন।

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ পালিত হবে মা দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও উদযাপন করা হবে দিনটি। আজ দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে মাকে নিয়ে বিশেষ লেখা, টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান। তবে ঘটা করে একটি দিনে মা দিবস পালনে দ্বিমত আছে অনেকের। প্রশ্ন আছে মা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণ নিয়েও।

অনেকেই বলছেন, কেবল দিবসচক্রে বন্দী থাকলে হবে না। শুধু একটি দিনে লোক দেখানো ভালোবাসা প্রকাশ করলে হবে না। মাকে ভালোবাসতে হবে প্রতিদিন। ঘরে-বাইরে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে মায়ের অধিকার। অবহেলিত মাকে দিতে হবে তার পূর্ণ মর্যাদা। শ্রদ্ধার আসনে বসাতে হবে মাকে। মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে না আসার শপথ নিতে হবে। তবেই স্বার্থক হবে মা দিবস উদযাপনের। অবশ্য আরেক পক্ষের দাবি, এটা সত্য মায়ের প্রতি ভালবাসা কখনও দিবসে সীমাবদ্ধ হতে পারে না। তবু একটি বিশেষ দিনে মাকে ঘিরে একটু সাড়ম্বর আয়োজন হলে ক্ষতি কী।

মা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে একাধিক তথ্য রয়েছে। ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন নথিপত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ঘটা করে পালিত হচ্ছে দিবসটি।

তবে তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসের উদ্যোগে দিবসটি যাত্রা শুরু হয়। অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’। নিরবে তিনি কাজ করতেন অনাথদের নিয়েও। ১৯০৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আনা মারিয়া মা দিবস প্রচলনের চেষ্টা করেন। ১৯০৮ সালে তিনি মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠানও করেন। এরপ্রেক্ষিতে একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দেয়। তবে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। এরপরও নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন আনা। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সরকারি দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করেন।

মা দিবস প্রচলনের অন্য ইতিহাস থেকে জানা যায়, আমেরিকায় জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামে একজন গীতিকার ১৮৭০ সালে মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তখন আমেরিকায় চলছিল ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। যুদ্ধে এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিলো অবলীলায়। এই হত্যাযজ্ঞ দেখে জুলিয়া খুব ব্যথিত হন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে সংঘবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক মা দিবস পালনে তার প্রস্তাব দেওয়ার এটাই ছিল কারণ। তিনি চেয়েছিলেন এই দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ১৮৭২ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড মে মাসের দ্বিতীয় রোববার তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন প্রথম মা দিবস পালন করেন।

অন্য একটি তথ্য থেকে জানা যায়, ১৬ শতকে ইংল্যান্ডে মা দিবস পালন করা হতো। দিবসটি তারা ‘মাদারিং ডে’ হিসেবে পালন করতো। সেদিন থাকতো সরকারি ছুটি। এদিন পরিবারের সবাই তাদের মায়ের সাথে কাটাতেন। যদিও দিবসটি অতটা প্রসারতা লাভ করতে পারেনি। তবে ১৬ শতকেরও আগে, এমনকি খ্রিস্টপূর্ব যুগেও মিশর, রোম ও গ্রিসে মা দিবস পালন করা হতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসয়াবিন : সাধারণ মানুষের কথা
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরে যুক্ত হলো আরো দুটি গ্যান্ট্রি ক্রেন