(পূর্ব প্রকাশের পর)
তৃতীয় সর্গ: সমাগম
লংকার বাইরে যুবরাজ মেঘনাদ এর প্রমোদ উদ্যানে বসে স্বামীর বিরহে প্রমিলা কাঁদছেন। মনে তার দুঃশ্চিন্তা, যুদ্ধ করার জন্য মেঘনাদ গিয়েছেন। সেখানে মেঘনাদ কি অবস্থায় আছে কে জানে। এসব কথা ভেবে প্রমিলা বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি একবার মন্দিরে প্রবেশ করছেন, আবার লংকার দিকে তাকিয়ে তিনি লংকার পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছেন। ছটফট করছে প্রমিলার মন মেঘনাদের চিন্তায়। এদিকে মেঘনাদ বলে গিয়েছেন যে, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ফিরবেন। কিন্তু বেশ সময় গড়িয়ে গেল। মেঘনাদ আসছেন না। এ চিন্তায় প্রমিলা তার সখী বাসন্তীর গলা জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। বাসন্তী প্রমিলাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। মেঘনাদ অবশ্যই রামকে হত্যা করে ফিরে আসবেন। মেঘনাদ যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরে আসবেন তার গলায় ফুলের মালা দেয়ার জন্য বাসন্তী প্রমিলাকে পরামর্শ দিলেন। বাসন্তী ও প্রমিলা দুই জনে বাগান থেকে ফুল তুলে মালা গাথতে লাগলো। তবুও প্রমিলার মন কিছুতেই স্থির হচ্ছে না। প্রমিলা লংকাপুরীতে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। তখন বাসন্তী প্রমিলাকে বললো, রাম তার সৈন্য দিয়ে পুরো লংকাপুরী ঘিরে রেখেছেন। তাই সেখানে প্রবেশ করা খুবই কঠিন। বাসন্তীর এ কথা শুনে প্রমিলা খুব রাগ করলেন। বললেন, ‘আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাগবে’? অর্থাৎ আমি রাক্ষস কুলের স্ত্রী। আমি রাজা রাবণের পুত্র মেঘনাদ এর স্ত্রী। আমার স্বামী রাক্ষস শ্রেষ্ঠ বীর মেঘনাদ। আমি ভিখারী রামকে ভয় পাবো কেন? আমি এখনই লংকাপুরীতে যাব। এ বলে প্রমিলা তার বীরঙ্গণা সখীদের সাজতে বলে নিজেও যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হতে লাগলেন। শেষ হলো প্রমিলার যুদ্ধ সাজ। সখীদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। প্রমিলা এখনই লংকাপুরীতে প্রবেশ করবেন নয়তো প্রাণ বিসর্জন দিবেন। আকাশ বাতাস নড়ে উঠলো। চতুর্দিকে ধূলি ঝড় হতে লাগলো। প্রমিলা তার সখীদেরকে নিয়ে লংকাপুরীতে পৌঁছে গেলেন। হনুমান তাদেরকে দেখে বাধা দিতে চাইলে প্রমিলার এক সখী ত্রিমুন্ডুমালীনী গর্জন করে উঠলো। বললো সীতা নাথ রামকে ডেকে আন, তোর সাথে কোন কথা নেই। অরিন্দম ইন্দ্রজিৎএর স্ত্রী প্রমিলা এখানে এসেছেন। তিনি লংকাপুরীর ভেতরে প্রবেশ করবেন। তখন বায়ুপুত্র ত্রিমুন্ডুমালীনীকে সাথে নিয়ে রামের কাছে গেলেন। রাম আদেশ দিলেন যে প্রমিলাকে সম্মানের সাথে লংকাপুরীতে প্রবেশ করতে দিতে। কারণ রামের শত্রুতা রাবণের সাথে। প্রমিলার সখীদের সাথে নয়। তাছাড়া প্রমিলার মত বীর্যবতী নারীর সাথে যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাই নেয় রামের। এরপর প্রমিলা তার সখীদের নিয়ে লংকাপুরীতে প্রবেশ করতে লাগলেন। এদিকে রাম বিভীষণের মাধ্যমে প্রমিলা সম্পর্কে সব খবর জানলেন। আগামীকাল যুদ্ধের কথা ভেবে ভয় পেতে লাগলেন। রামকে অভয় দিয়ে বললেন, ভয়ের কোন কারণ নেই। সকল দেবতা রামের পক্ষে আছেন এবং কালকের যুদ্ধে লক্ষণের হাতে মেঘনাদের মৃত্যু হবে। প্রমিলা লংকাপুরীতে প্রবেশ করলে মেঘনাদ প্রমিলাকে দেখে খুব খুশি হলেন, তারা আনন্দে সময় পার করতে লাগলেন। এদিকে কৈলাসে বসে দেবী উমা এবং দেবী দূর্গা সব দেখছেন। লংকাপুরীতে প্রমিলার আগমন দেখে সখী বিজয়াকে বলছে মেঘনাদের সাথে এখন প্রমিলাও লংকাপুরীতে চলে এসেছে। এ অবস্থায় দেবী দুর্গা কিভাবে মেঘনাদকে পরাজিত করাবেন? সুখী জয়ার কথা শুনে দেবী দুর্গা বললেন– দেবী দুর্গার একটি অংশ দিয়ে প্রমিলার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে প্রমিলাও দেবী দুর্গার ন্যায় এত বীর্যবতী বা তেজস্বী হয়েছে। কালকে যুদ্ধে দেবী দুর্গা প্রমিলা থেকে সেই অংশটুকু হরণ করবেন বা কেড়ে নিবেন। এর ফলে প্রমিলা একজন সাধারণ নারীর মত হয়ে যাবে। প্রমিলার আর কোন তেজদীপ্ত ক্ষমতা থাকবে না। তারপর যুদ্ধে পরাজিত হলে মেঘনাদকে শিবের সেবায় এবং প্রমিলাকে দেবী দুর্গার সেবায় নিয়ে আসবেন। কারণ মেঘনাদ ছিল শিবের ভক্ত আর প্রমিলা ছিল দুর্গার ভক্ত। এ কথা বলে দেবী পার্বতী বা দেবী দূর্গা বিশ্রামের জন্য শয়ণ কক্ষে যান। (চলবে)
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ।









