ভৌগোলিক নির্দেশক বা ‘জিআই’ পণ্য হিসাবে মহেশখালীর মিষ্টি পানের স্বীকৃতি পেতে খুব শীঘ্রই শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে জেলা প্রশাসন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান গতরাতে দৈনিক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর পান মিষ্টি। এই পান কক্সবাজার ছাড়া দেশের অন্য কোথাও হয় না। এখানকার সংস্কৃতির সাথেও উৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পান। ‘মহেশখালীর মিষ্টি পান’ এর জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদনের জন্য খুব শীঘ্রই একটি প্রশাসনিক সমন্বয় সভা করা হবে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী–কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক।
কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, লোক গবেষক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের আবহমান সংস্কৃতিতে পান একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। কোন বিয়ে অনুষ্ঠানের এক দুইদিন আগে বর ও কনে বাড়িতে মুরুব্বীদের নিয়ে যে পরামর্শ সভা বসে, একে ‘পানছল্লা’ (পান খেতে খেতে পরামর্শ করাকে বুঝায়) বলা হয়। বিয়ের অন্যান্য অনুষ্ঠানেও পান একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ। তাই মহেশখালীর মিষ্টি পানকে কক্সবাজার জেলার ভৌগোলিক নির্দেশক বা ‘জিআই’ পণ্য হিসাবে তালিকাভুক্ত করা উচিত।
কক্সবাজার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মো. কবির হোসেনও কক্সবাজার জেলার ভৌগোলিক নির্দেশক বা ‘জিআই’ পণ্য হিসাবে মহেশখালীর মিষ্টি পানকে তালিকাভুক্ত করার পক্ষে। তিনি বলেন, মহেশখালী, রামু, সদর, চকরিয়া ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ কক্সবাজার জেলার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি পানের চাষ হয়ে থাকে। যার অর্ধেকই মহেশখালীতে। মহেশখালীতে প্রায় ৩০ হাজার চাষি ১৬শ হেক্টর জমিতে পানের চাষ করে থাকে। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর পান মিষ্টি। এই পানের কেমিক্যাল কম্পোজিশন ভিন্ন।
বিজ্ঞানীদের মতে, পান পাতার উদ্ভিদতাত্ত্বিক বা বৈজ্ঞানিক নাম পাইপার বিটল। পৃথিবীতে প্রায় ৯০ ধরনের পান রয়েছে। তবে পান পাতার কেমিক্যাল কম্পোজিশন ভৌগলিকভাবে পরিবর্তিত হয়, পার্থক্য থাকে স্বাদেও।
পান বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে একটি জনপ্রিয় মাউথ ফ্রেশনার। হজম সমস্যা এবং গলা ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ঐতিহ্যগত ওষুধ হিসাবেও ব্যবহৃত হয় পান পাতা। বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষায় পান পাতার রসে অ্যান্টি–ডায়াবেটিক, কার্ডিওভাসকুলার, অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি/ইমিউনোমোডুলেটরি, অ্যান্টি–আলসারসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, কোনো একটি অঞ্চলের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং সেখানখার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে ওই অঞ্চলের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে পণ্যগুলো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। পণ্যগুলোর আলাদা কদর থাকে। ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। এরই ওপর ভিত্তি করে জিআই পণ্যের সনদ দেয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদন, জার্নাল প্রকাশসহ দীর্ঘ পরিক্রমায় জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মেলে।