মহেশখালীতে কাঁকড়ায় সমৃদ্ধির হাতছানি

৩০ হাজার একর জমিতে চাষ হচ্ছে, জড়িত কয়েক হাজার মানুষ

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | মঙ্গলবার , ২১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় কাঁকড়া চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। সাগর বেষ্টিত এই দ্বীপে রয়েছে কাঁকড়া চাষের বিশাল ভাণ্ডার। মহেশখালীর সোনাদিয়া, ঘটিভাঙা, কুতুবজোম, হোয়ানক, কালারমারছড়া, শাপলাপুর, ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি অঞ্চলজুড়ে আনুমানিক ৩০ হাজার একর জমিতে সমন্বিতভাবে রপ্তানি যোগ্য চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ হচ্ছে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁকড়া রপ্তানি হয় ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, মিশর, জাম্বিয়া, ঘানা, চীন, জাপান, হংকং এবং থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের প্রায় ১৮টি দেশে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৮৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিযোগ্য মৎস্য পণ্য। মহেশখালী উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ কাঁকড়াকে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ সম্পর্কে চাষিদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা গেলে এটি হয়ে উঠতে পারে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি শক্তিশালী খাত।

কাঁকড়া চাষে সংশ্লিষ্টরা জানান, মহেশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি ঘের, নদীর মোহনা ও সমুদ্রের আশপাশের এলাকা থেকে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা কাঁকড়া সংগ্রহ করে থাকেন তারা। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও উপজেলার অনেক স্থানে কাঁকড়ার চাষ করা হচ্ছে।

কাঁকড়া ব্যবসায়ী শান্তি লাল নন্দী জানান, তৃণমূল আহরণকারীদের নিকট হতে তারা ওজন ভেদে প্রতি কেজি ২শ থেকে ৪শ টাকা দরে ক্রয়ের পর সেগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের কাছে ৩শ থেকে ৫শ টাকা দরে বিক্রি করেন। এরপর রপ্তানিকারকেরা সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করে। মহেশখালীতে অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে চিংড়ি ও কাঁকড়া একই সাথে চাষ করা হয়।

মহেশখালীর হোয়ানক বড়ছড়া গ্রামের কাঁকড়া শিকারি সন্তোষ কুমার দে বলেন, আমরা এখন খাল, নদীর আর উপকূলীয় প্যারাবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করি। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কেজি কাঁকড়া সংগ্রহ করি। বিক্রি করে সংসার চলে। এছাড়া কাঁকড়া চাষে স্বল্প পুঁজি ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। তিনি জানান, একটি বাচ্চা কাঁকড়া পূর্নাঙ্গ কাঁকড়ায় রূপান্তরিত হতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন।

কাঁকড়া ব্যবসায়ী বাঁশী রাম দে জানান, কাঁকড়া ব্যবসা করে প্রতি মাসে তার ২৫৩০ হাজার টাকা আয় হয়। স্থানীয় ও বিদেশের বাজারে মেয়েলী কাঁকড়ার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ২৫০৪৫০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি মেয়েলী কাঁকড়া ৮৫০৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি মন্তব্য করেন, জেলা মৎস্য সম্পদ অফিস বা বেসরকারি এনজিও সংস্থার উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে চাষি, ডিপো মালিক ও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে সংশ্লিষ্টরা কাঁকড়া চাষে আরো বেশি উৎসাহিত হতেন। এছাড়া সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে অনাবাদী ও পরিত্যক্ত জমি কাঁকড়া চাষের আওতায় আনা সম্ভব হত এবং ভূমির সর্বোত্তম সদ্বব্যবহার হতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের সিরিজ জয়ের মিশন আজ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কমেছে ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা