ঠিক হুইল চেয়ারে নয়, পায়ের একটা সাপোর্টিং ধরে ধীরপায়ে আসছেন এক নারী। পরনে শ্বেত শুভ্র বসন, চেহারায় আভিজাত্য। তিনি মহিলা সমিতির প্রবীণ সদস্য লুসি আপা। ভাল করে হাঁটতে পারছেন না, অথচ কাপ্তাইয়ে পিকনিকে যাওয়ার কি আকুল ইচ্ছা। কাপ্তাইয়ের নিসর্গ রেস্টুরেন্টে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ‘এত কষ্ট করে এসেছেন, কেমন লাগছে আপনার?’ তিনি মৃদু হেসে বলেন, অনেক ভালো লাগছে। উনার মতো বয়সে প্রবীণ অনেক নারীই সেদিন কাপ্তাইয়ে মহিলা সমিতির আনন্দ ভ্রমণে অংশগ্রহণ করেছিলেন। উনাদের বেড়ানোর অসীম আনন্দ দেখেছি আমি অপার বিস্ময়ে। জার্নির ক্লান্তি নেই, জায়গায় জায়গায় গাড়ি থেকেই নামছেন, ছবি তুলছেন, গল্পগুজব আর হাসি ঠাট্টারও কমতি ছিলনা। আর নবীনদের কথা কি বলবো, এদেরতো খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। কোন প্রান্ত থেকে কোন প্রান্তে ছুটছে চড়ুই পাখির মতো ফুরুত ফুরুত করে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, আর ছবি তুলছিল। সুপ্রিয় পাঠক, এতক্ষণ বলছিলাম মহিলা সমিতির আনন্দ ভ্রমণের কথা, যা গত ১০ ডিসেম্বর কাপ্তাইয়ের অপরূপ নিসর্গ স্পট জীবতলীতে সম্পন্ন হয়। সমিতির প্রেসিডেন্ট সাবেক লায়ন পিডিজি কামরুন মালেক ও সেক্রেটারি জেসমিন সুলতানা পারুর নেতৃত্বে এই আয়োজনে সমিতির সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজনে কোন আড়ম্বরপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য ভাব ছিল না, অংশগ্রহণকারীও খুব বেশি না, তবে আন্তরিকতা ছিল অনেক। একেবারে কানায় কানায় পূর্ণ। আয়োজনে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছেন দৈনিক আজাদীর কাপ্তাই প্রতিনিধি কাজী মোশাররফ। তিনি জীবতলীতে ঘোরানো থেকে শুরু করে নিসর্গ রেস্টুরেন্ট, এর আগেই আমাদের দুই খালাতো ভাই কাপ্তাইয়ের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আমীন কাদেরী আর খোরশেদ কাদেরীর আয়োজনে উপজেলা অডিটোরিয়ামে মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠান, চা পর্ব, রিফ্রেশমেন্ট এবং ফিরতি পথে ওয়াজ্ঞা চা বাগান অফিসে চা পান আর আড্ডা ছিল এই আনন্দ ভ্রমণের বাড়তি পাওনা। মূলত কাপ্তাই আমাদের চট্টগ্রাম শহর থেকে এতই কাছে ইচ্ছে করলে খুব সহজেই যাওয়া যায়। তাই এসব এলাকায় কবে থেকেই যে কতোবার আসা–যাওয়া করেছি, তার কোন হিসেব নেই। তবে প্রতিবারের আনন্দে ছিল ভিন্ন আমেজ, নিত্য নব উপলব্ধি। মামী প্রেসিডেন্ট, তিনি সবার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মামী সাথে নিয়েছেন দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবরকে। ধরতে গেলে হাসান আকবরই তাদের প্রতিনিধি মোশাররফের মাধ্যমে পুরো আয়োজন সাজিয়েছিলেন। পারু আপা তো পারু আপাই। জাস্ট এক পিস। মহা স্পষ্টবাদী। মাশাআল্লাহ। উনার দুপা যেভাবে চলে, সমান তালে মুখও বন্ধ নেই। সবার তদারকি তো করছেন, কথাবার্তায় সর্বক্ষণ মাতিয়ে রেখেছিলেন। আর আমাদের পান্না আপা একেবারে শান্ত স্নিগ্ধ। কম কথা বলেন। কিন্তু খুবই মজার মানুষ। তিনি অনেক ঘুরে বেড়ান। সেদিনও ছিলেন স্বভাবসুলভ ফুরফুরে মেজাজে। আরো মজার নিশাত ইমরান। তিনিও ধীরস্থির, শান্ত। কিন্তু দারুণ রসিক। যাত্রা শুরুর কথা ৯ টায়। তিনি আসেন ৯ টার পরে। মেম্বাররা জিজ্ঞেস করেন, এখন কয়টা বাজে? তিনি একটুও না হেসে উত্তর দিলেন, কেন? এখন তো মাত্র ৮ টা বাজে! সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। এদিকে উইমেন চেম্বারের জনপ্রিয় জুটি বেবী আর জিপসী তো বন্ধুত্বে হরিহর আত্মা। তাদের উচ্ছলতায় ছিল ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। হাসি–ঠাট্টা আর ছবি তোলায় দুইজন সেরা। আমাদের বন্ধুবরের মেম্বার শুভ্রাকে এই প্রথমবার পেলাম মহিলা সমিতিতে। তবে শুভ্রা ইনার হুইলের সাথে জুটি বাঁধায় কিছুটা বিচ্ছিন্ন ছিল আমার কাছ থেকে। সে রেহানা আপা আর বৈশাখীদির সঙ্গী ছিল। আর রোকেয়া আপা, পারভীন আপা, আরেফা আপা, নুর আক্তারসহ সবার উপস্থিতিতে সে দিনের আনন্দ আড্ডা অন্যরকম আনন্দ ভ্রমণে পরিণত হয়। ধন্যবাদ জানাই আয়োজকদের। খুব অল্প সময়ে চমৎকার একটি ট্রিপ সবাইকে উপহার দেয়ার জন্য। দেশের ক্রান্তিলগ্ন ও সংকটকালে যেখানে সকলের মন আশা নিরাশার দোলাচলে দুলছে, সেখানে শীতের শুরুতেই নারীদের জন্য এমন আয়োজন, সত্যিই প্রশংসনীয় এক উদ্যোগ। শুভকামনা সকলের জন্য। নারীদের পথচলা সুন্দর আর আনন্দময় হোক সর্বদা।












