মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণে রেখে ঐক্যের আহ্বান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের

আমার পিতা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অন্তরে ধারণ করতেন : নওফেল

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এম.পি. বলেছেন, প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে জনগণ ও দেশের স্বার্থে অনেক কাজ করেছি। তিনি একজন সাহসী ও আপসহীন জননেতা ছিলেন। অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সব সময় অগ্রভাগে ছিলেন। কখনো পিছপা হননি। আমরা যদি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণে রেখে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন থাকতে পারি তাহলে সকল আন্দোলন ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা জয়ী হবেই-এই বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করি বলেই আমি ঐক্যের আহ্বান জানাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর আইসিসি কনভেনশন সেন্টারে প্রয়াত জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সিটি মেয়র মরহুম এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও প্রয়াত এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এম.পি।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এম.পি. আরো বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় আস্থা ও ভরসার প্রতীক ছিলেন। ১৯৭৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া তখন ক্ষমতায়। ঐসময় একটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। আমাদের আবদুর রাজ্জাক ভাই সেদিন হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু হতে চেয়েছিলেন। তিনি ইচ্ছেমতো তার মাইম্যানদের নমিনেশন দিচ্ছিলেন। ঐসময় মহিউদ্দিন চৌধুরী ফেরারী ছিলেন। গভীর রাতে আমার বাসায় আসতেন। দলের অবস্থা এবং রাজ্জাক ভাইয়ের কূটকৌশল নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করতাম। মহিউদ্দিন ভাই সেসময় এমন কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সেগুলো কাজে এসেছিল।

বঙ্গবন্ধুকে যারা ভালবাসতেন তারা যাতে নমিনেশন পান সে ব্যাপারে আমাকে উদ্যোগী হতে বলেছিলেন। আমাকে ঢাকায় গিয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে কথা বলে কি করতে হবে সে ব্যাপারেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন আমি যাদের পছন্দ করি তাদের নিয়ে ঢাকায় যেতে। আমি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বলেছিলাম আমার সাথে যারা ঢাকায় যাবে তাদেরকে রাজ্জাক সাহেব নমিনেশন দেবেন না। মহিউদ্দিন আমাকে এও বলেছিলেন হাল ছাড়বেন না। আমি হাল ছাড়িনি।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় চট্টগ্রামে ২৩টি আসনে একটিতেও আওয়ামী লীগ জিতেনি। এমনকি মীরসরাইয়ে আমার পরিবর্তে যাকে নমিনেশন দিয়েছিলেন ঐ ব্যক্তিকে আমি যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করার পরও তিনি জঘন্যভাবে ধরাশায়ী হয়েছিলেন। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত চিত্তে বলেন, না বলে পারছি না, রাজ্জাক ভাই দলের অনেক ক্ষতি করেছেন। শেখ হাসিনা নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে আসার পর দলের হাল ধরেন। সে সময়ও রাজ্জাক ভাই দলকে টুকরো করেছেন এবং আলাদা দল করেছেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাজ্জাক ভাইকে নমিনেশন দিয়েছিলেন। দল ক্ষমতায় গেলে রাজ্জাক ভাইকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এতেই বুঝা যায় শেখ হাসিনা প্রতিশোধ পরায়ণ ছিলেন না, তিনি বড় হৃদয়ের মানুষ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও প্রয়াত এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এম.পি. তাঁর পিতার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, আমার পিতা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অন্তরে ধারণ করতেন। পিতাকে নিয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নেই। তিনি বলেন, দেশবিরোধীদের চক্রান্তের জবাব দিতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতায় ও নবীনদের উজ্জীবিত তেজে এক সুতোয় গেঁথে সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে হবে এবং জনগণের মাঝে দলের পরিধি বিস্তৃত করতে হবে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন।

আরো বক্তব্য রাখেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, বখতিয়ার উদ্দীন খান, মোঃ জাবেদ, এম.এ হালিম, মোঃ ইছহাক, মোমিনুল হক, সামশুল আলম, আবছার উদ্দীন চৌধুরী, গিয়াস উদ্দীন, পরিবারের পক্ষে এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন, ইউনিট আওয়ামী লীগের মামুনুর রশিদ মামুন।

সভা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. সুনীল কুমার সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আবদুচ ছালাম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, শফিকুল ইসলাম ফারুক প্রমুখ। এর আগে সকালে চশমা হিল জামে মসজিদের পার্শ্বস্থ কবরস্থানে এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী কবরে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় কাজির দেউড়িস্থ ইন্টানন্যাশনাল কনভেনশন হলে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬