মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ তিন চাকার যান

বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

মাত্র দুই লেনের হওয়ায় একেবারেই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। গত কয়েকবছর ধরে মহাসড়কটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হলেও নিরাপদ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারিসহ দুর্ঘটনার অন্যতম বাহন তিন চাকার গাড়ি চলাচল রোধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং অদক্ষ চালকের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নৈরাজ্য থামছেই না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সরকার মহাসড়কগুলোতে তিন চাকার (ত্রি-হুইলার) যানবাহন চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ করলেও ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এসব যানবাহন চলছেই। এতে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এই মহাসড়কে দূরপাল্লার ও ভারী যানবাহনগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে তিন চাকার এসব যান। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও এসব যানবাহনের অদক্ষ চালক ও মালিকদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আবার স্থানীয় যাত্রীরাও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এই বাহনকে ব্যবহার করে চলছেন। এতে সড়ক দুর্ঘটনা আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
সচেতন মহলের মতে, সারা দেশে যেসব মহাসড়ক রয়েছে, এরমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছিল বেশ নিরাপদের। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নিরাপদ মহাসড়কটি হয়ে ওঠে মৃত্যুফাঁদে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ৩৯ কিলোমিটার অংশের প্রায় ২০ কিলোমিটারে সরেজমিন দেখা যায় এই নৈরাজ্য। এ সময় মহাসড়কের বানিয়ারছড়ায় অবস্থিত চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাড়া সড়কের অন্য কোথাও দেখা মেলেনি নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এ সংস্থার সদস্যদের। মূলত হাইওয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দেদার চলছে তিন চাকার এসব যানবাহন।
বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশারচালক আবদুল হামিদের সঙ্গে। এ সময় তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার মহাসড়কে তিন চাকার যেকোনো ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে, বিষয়টি জানেন কি-না। প্রত্যুত্তরে চালক বলেন, এটা তো কয়েকবছর ধরে শুনে আসছি, মহাসড়কের তিন চাকার যানবাহন ওঠতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে মাঝেমধ্যে আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে হাইওয়ে পুলিশ অভিযানে নামে। এর পরেও তো দেখছি ঠিকই এসব যানবাহন মহাসড়কে চলাচল করছে। তাই আমিও মহাসড়ক দিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করছি।
এর আগে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পয়েন্টে কথা হয় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক-টমটম চালক কফিল উদ্দিনের সঙ্গে। এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, মহাসড়কে টমটম নিয়ে বের হয়েছেন কেনো? জবাবে কফিলের ভাষ্য, হাইওয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ যদি আমাদের নিষেধ করতো তাহলে তো আমি টমটম নিয়ে মহাসড়কে আসতাম না। অন্যরা চালাচ্ছেন দেখে আমি নিজেও বের হয়েছি টমটম নিয়ে। এতে দোষের কী আছে?
সরেজমিন দেখা যায়, দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবোঝাই ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানে চলছে তিন চাকার যান বিশেষ করে ইজিবাইক-টমটম, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, নছিমন-করিমন, মাহিন্দ্র। এছাড়া একেবারে স্বল্প আকৃতির চার চাকার যানবাহনও যাত্রী পরিবহন করছে বেশি। এরমধ্যে লেগুনা, ছারপোকা, ম্যাজিক গাড়ি অন্যতম। চার চাকার এসব যানবাহনে চলাচলও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নিরাপদ সড়ক চাইসহ বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে এই সড়কের চকরিয়ার ৩৯ কিলোমিটার অংশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনের কারণে। কিন্তু এসব যানবাহনে যাত্রা যে চরম ঝুঁকির সেই বিষয়টি কেউই আমলে নেয় না। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যাচ্ছে প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে বেশুমার মানুষ।
নিরাপদ সড়ক চাই কক্সবাজার জেলার সভাপতি জসীম উদ্দিন কিশোর দৈনিক আজাদীকে বলেন, সারা দেশের মধ্যে খুবই ব্যস্ততম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক। তাই এই মহাসড়কটি ৬ বা ৮ লেনে রূপান্তর করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু দুই লেনের এই মহাসড়কে যেভাবে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, সেই হিসেবে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো নজরদারি নেই। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে তিন চাকার গাড়িগুলোও। এতে প্রতিনিয়ত প্রাণ ঝরছে মানুষের।
মহাসড়কের নিরাপত্তায় নিয়োজিত চকরিয়ার চিরিঙ্গা ও মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও ইমন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাইওয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করে। এর পরও বিভিন্ন উপ-সড়ক থেকে হুট করে মহাসড়কে উঠে পড়ছে তিন চাকার গাড়িগুলো। তারা বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক এবং দুর্ঘটনা রোধে তিন চাকার এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেপি দেওয়ান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্যখাত নিয়ে বিএনপির বক্তব্য চিন্তার দৈন্যের বহিঃপ্রকাশ : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসব দেশে টিকা নিশ্চিতে সহায়তার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর