মহাসপ্তমীতে মণ্ডপগুলোতে ভিড়, উৎসবের ছোঁয়া

শারদীয় দুর্গোৎসব আজ মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

শারদীয় দুর্গোৎসবে শাঁখের ধ্বনি আর ঢাকের বাদ্যিতে ভক্তদের পদচারণায় গতকাল মুখর ছিল মহাসপ্তমীর পূজামণ্ডপ। সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রামের মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় আরো বাড়ে। বিশেষ করে নগরীর থিমভিত্তিক মণ্ডপগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। মণ্ডপে মণ্ডপে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ এবং চণ্ডীপাঠ, শাঁখের ধ্বনি, ঢাকের বাদ্যিতে সকাল ১১টার মধ্যে মহাসপ্তমী বিহিত পূজা সম্পন্ন হয়। এরপর ভক্তরা মায়ের চরণে অঞ্জলি দেন। সন্ধ্যার পর থেকে পূজামণ্ডপগুলো ঢাকঘণ্টার বাদ্যিবাজনা আর ভক্তদের পূজাঅর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষও। এতে মণ্ডপগুলো বাঙালির সর্বজনীন উৎসবে রূপ নেয়।

পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এখন আনন্দমুখর পরিবেশ। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকালে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় চান্দগাঁও সাধুরপাড়া পুজামণ্ডপসহ বেশ কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এদিকে গতকাল মহাসপ্তমীর সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে শারদীয়া দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, ঘট স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। এরপর দেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। নগরীর জেএমসেন হলে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পূজামণ্ডপে এবং চান্দগাঁও সাধুরপাড়া পূজামণ্ডপসহ বেশ কয়েকটি মণ্ডপে ছিল আরতি, বস্ত্র বিতরণ, ভক্তিমূলক সঙ্গীত, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন।

চান্দগাঁও সাধুরপাড়া পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এ সময় তাকে স্বাগত জানান সাধুরপাড়া পূজা পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী আশিস কুমার নাথ। উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মাহতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল মান্নান, উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান, উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জয়নুল আবেদীন ও পূজা কমিটির আশিষ কুমার নাথ।

আজ মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা : আজ রোববার শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনে মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা। দুপুরের পর অনুষ্ঠিত হবে সন্ধিপূজা। নগরীর পাথরঘাটার শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরসহ বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে আজ একই সঙ্গে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাঅষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাঅষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে বিকাল ৪টা ৫মিনিট থেকে ৪টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনের প্রধান আকর্ষণ কুমারী পূজা। শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে প্রতি বছরের মতো এবারও কুমারী পূজা হবে। এবার আকর্ষণীয় বিষয় হলো, ১১ জন কুমারীর অংশগ্রহণে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এই তথ্য জানিয়ে শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরের মহারাজ স্বামী শ্যামনন্দ (শ্যামল সাধু) মহারাজ বলেন, সনাতন ধর্মে সম্মানের বিচারে নারীকে শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে দেবীর কুমারী রূপের আরাধনায় এই পূজার বিধান দেওয়া হয়েছে। শাস্ত্রমতে কুমারী পূজায় কুমারী মেয়েকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পুরাণমতে, তার একটি নামকরণও করা হয়েছে। দেবীর এক বছরের কুমারীকালকে সন্ধ্যা, দুই বছরে সরস্বতী, তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে কালিকা, পাঁচ বছরে সুভগা, ছয় বছরে উমা, সাত বছরে মালিনী, আট বছরে কুষ্ঠিকা, নয় বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রুদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহালপ্তী, চৌদ্দ বছরে পীঠনায়িকা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোলো বছরের সময়কে অন্নদা বা অম্বিকা নাম দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বাস করি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধসুনীল অর্থনীতি থেকে যুক্ত হতে পারে অতিরিক্ত ৬ বিলিয়ন ডলার