সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দূরপাল্লার যানবাহনসহ সব ধরনের গণপরিবহনের যাতায়াতে বিঘ্নতা সৃষ্টি করছে সিএনজি টেক্সি, ব্যাটারি চালিত রিকশা, লেগুনা, নছিমন, করিমন, ভটভটি, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন অবৈধ গাড়ি। ধীরগতির এসব যানবাহনের চালকরা মহাসড়কে প্রায় বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালানোর কারণে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে যেমন বেশি সময় লাগছে, তেমনি ঘটছে দুর্ঘটনাও। ঢাকা–চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম–রাঙামাটি, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে ইজিবাইক ও সিএনজি টেক্সির কারণে গত এক সপ্তাহে ১০টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিষিদ্ধ হলেও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন। অলিগলি থেকে হঠাৎ বের হয়ে মহাসড়কে উঠে যাচ্ছে বেপরোয়া গতিতে। এতে হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। দ্রুত গতির দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে এসব অবৈধ যানবাহন। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে মাসোহারা নিয়ে এসব রিকশা ও সিএনজি চলতে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ বলছে নামসর্বস্ব কিছু অসাধু দালাল সাংবাদিকদের নামে চলছে এসকল রিকশা, সিএনজি।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড অংশে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ফৌজদারহাট থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত প্রায় ৬৩ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় তাজা প্রাণ ঝরছে। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ত্রি–চক্রযানের চলাচল নিষিদ্ধ করাসহ গতিরোধক এবং একাধিক পয়েন্টে পথচারী পারাপারে ওভারব্রিজ স্থাপন করেও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো যায়নি। এ বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ৬৩ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রাণ গিয়েছে ১৫ জনের। আহত হয়েছে অর্ধ শতাধিক। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজি, থ্রি–হুইলার, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। অথচ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সরকার এসব যানবাহন মহাসড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ৬ বছর আগে। ফলে প্রতিটি স্টেশনে দীর্ঘ যানজটের পাশাপাশি ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা।
কক্সবাজার সড়কে চলাচলকারী ঈগল পরিবহনের চালক আব্দুল মোতালেব বলেন, ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার জন্য গাড়ি চালানোই দায়! হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে, গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হয়। যার কারণে হরহামেশাই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কোনও আইনি ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে এসব গাড়ির পরিমাণ।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া কেরানীহাটের পূর্ব পাশ থেকে একের পর এক ছেড়ে যায় চার চাকার ‘ছারপোকা’। মহাসড়কের ৩০ ফুটের ভেতর কোনও স্থাপনা নিষিদ্ধ হলেও মাত্র কয়েক ফুটের মধ্যে গাছ–বাঁশের খুঁটি গেড়ে বসিয়েছে লাইন অফিস। সেখান থেকেই কার্যক্রম চালানো হয় এসব ‘ছারপোকা’।
লোহাগাড়া সদর এলাকা থেকে চকরিয়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া পর্যন্ত যাত্রী বহন চার চাকার ছারপোকা, সিএনজি অটোরিকশা। এছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোও পিছিয়ে নেই দূরপাল্লার ভাড়া নিতে। সেগুলোও মহাসড়ক দাপিয়ে ঘুরে বেড়ায় আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায়। ফলে বাস স্টেশনের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুর রব জানান, মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি–হুইলার গাড়ি মোটেও চলতে পারবে না। প্রতিদিন হাইওয়ে পুলিশের অভিযান চলছে, আটক করে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। টাকা লেনদেনের ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া অংশে অবাধে চলছে অনুমোদনহীন সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত রিকশা। ব্যস্ততম মহাসড়কে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত রিকশা চলায় বেড়েছে দুর্ঘটনা। ছোট–বড় অসংখ্য যানবাহন ব্যস্ততম এ মহাসড়কে প্রতিনিয়ত বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এসব ছোট–বড় যাবাহনের সাথে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার নিষিদ্ধ এসব সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত রিকশা। এ যেন মহাসড়কে এক মহা আতংক। হাইওয়ে পুলিশের দাবি, অনেক স্থানে পুলিশের চোখ এড়িয়ে চলছে এসব যানবাহন। মহাসড়কে এসব অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের পাশাপাশি দেশি নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে স্থানীয়ভাবে সংযোজন করে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো তৈরি করা হয়। এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। নগর এলাকায় যানজট ও দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ২০১৫ সালে নিষিদ্ধ হয় ব্যাটারিচালিত রিকশা। পাশাপাশি মহাসড়কেও অটোরিকশাসহ কম গতির যানবাহন নিষিদ্ধ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
এদিকে মহাসড়কে দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনা দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার এক–তৃতীয়াংশই ঘটেছে মোটরসাইকেলের কারণে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়কে এসব সমস্যা নিরসনের দাবিতে গত ৯ অক্টোবর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম–দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজার–বান্দরবান জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার–বান্দরবান, পিএবি বাঁশখালী রোডের শৃঙ্খলা আনয়ন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কে নিষিদ্ধ ও অবৈধ টমটম, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, থ্রি–হুইলারসহ বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু কোন কর্ণপাত করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।