মহাকাশের পথে যাত্রা করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্পেস টেলিস্কোপ। এক হাজার কোটি ডলার খরচ করে নির্মিত ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে (জেডব্লিউএসটি)’ বিবেচনা করা হচ্ছে একুশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিশ্রুতিশীল বৈজ্ঞানিক প্রকল্পগুলোর একটি হিসেবে।
ফ্রেঞ্চ গিনিতে অবস্থিত ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ)’ লঞ্চপ্যাড থেকে জেডব্লিউএসটি যাত্রা শুরু করেছে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে। প্রকল্পের নকশা থেকে শুরু করে মহাকাশ যাত্রার মাঝে পার হয়েছে ৩০ বছর; শেষ অবধি খরচ গিয়ে পৌঁছেছে প্রাথমিক বাজেটের প্রায় ১০ গুণে। এত সময় আর অর্থ খরচ করে নির্মিত জেডব্লিউএসটি’র মূল লক্ষ্য- মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রপুঞ্জ আর ছায়াপথের খোঁজ বের করা। পাশাপাশি অনেক দূরের গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রাণধারণের উপযোগী গ্যাসের উপস্থিতির খোঁজ করবে টেলিস্কোপটি।
বার্তা সংস্থা আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এর খরচ ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ২০ কোটি ডলার, তা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার কোটি ডলার! ২০১০ সালে ‘নেচার’ পত্রিকায় ওই দূরবিন নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘দ্য টেলিস্কোপ দ্যাট এট অ্যাস্ট্রোনমি’। নাসার সাদা হাতি ওই দূরবিন বানাতে এত খরচ হয়েছে যে ওই সংস্থার পক্ষে বিশ্বতত্ত্বের অন্য অন্য অনুসন্ধান হাতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত অর্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। না হলে এই টেলিস্কোপের আর আলোর মুখ দেখা হত না।
টেলিস্কোপের প্রধান বিজ্ঞানী নোবেলজয়ী জ্যোতিঃপদার্থবিদ জন ক্রমওয়েল ম্যাথার বলেছেন, ২৯ দিন পরে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পৌঁছবে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। ওখান থেকে পাঠাবে তথ্য। সে তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পারব ‘বিগ ব্যাং’-এর দশ কোটি বছর পরে প্রথম নক্ষত্রগুলোর আলো কেমন ছিল। তিনি বলেন, বিশাল আয়না এবং চারটি অতি-সংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের অনেক গভীর পর্যন্ত দেখতে পাবেন।
নাসা ব্যবস্থাপক বিল নেলসনের ভাষায়, ওয়েব একটা বিস্ময়কর মিশন। আমরা বড় স্বপ্ন দেখলে সেখান থেকে কতোটা অর্জন করতে পারি তার জ্বলজ্বলে উদাহরণ এটি।