মা দুর্গা কখনো জগৎকে চালান ও প্রতিপালন করেন জগদ্ধাত্রী রূপে, আবার কখনো প্রলয়কালে তিনিই হয়ে উঠেন প্রলয়ংকারী দেবী কালিকা। বহু শক্তির সম্মিলনে মা আসেন প্রতি বছর এই পৃথিবীতে। মায়ের চারদিকে তাকালে সে চিত্র ফুটে উঠে। মা দুর্গার ডান দিকে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা লক্ষ্মী ও জ্যেষ্ঠ পুত্র গণেশ। বাম দিকে কনিষ্ঠ পুত্র কার্তিক ও কনিষ্ঠ কন্যা সরস্বতী এবং ওপরের চালচিত্রে স্বামী শিব।
মাতৃ পূজায় আবার মহিষাসুরের পূজাও হয়ে থাকে। এই এক অনুপম বার্তা যেখানে মা দুর্গা তাঁর ভালো খারাপ সব সন্তানের প্রতি মমতার সাগর। যেখানে প্রেমহীন নির্দয় শূন্যমরুভূমিতে অশুভ অহংকারী শক্তির প্রেত নৃত্য চলছে, সম্পদ মারণাস্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। যেখানে মানুষের প্রচেষ্টা প্রেমার্দ্র দুঃখ মোচনী প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়ায় বিনিযুক্ত হচ্ছে না সেখানে ছড়িয়ে দিতে হবে মায়ের গুণকীর্তন। মায়ের আগমনী বার্তা আমাদের শুভ শক্তি জাগ্রত করার প্রেরণা যোগায়।
সুর অসুরের দ্বন্দ্ব চিরকাল দেখা যায়। দেবতাগণ অসুরের নিকট পরাজিত হয়ে রাজ্যহারা হন। স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে দেবতারা যখন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা সুর শক্তির আগমনের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। দেবতাদের থেকে আমরা মহামিলনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। সামাজিক ঐক্য স্থাপনের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। ঐক্য স্থাপনের জন্য প্রয়োজন সকল সুর শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নতুবা অশুভ শক্তির পাদুর্ভাব ঘটবে। মায়ের সাথে মহিষাসুরও আমাদের মাঝে প্রতি বছর আসেন। অশুভ শক্তির প্রতীক মহিষাসুর নারীরূপী মহাশক্তি দুর্গার মোহে মোহিত হয়ে মা দুর্গাকে উগ্রভাবে কামনা করেছিল। বর্তমান সমাজে ভোগবাদী মানুষের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারাও মহিষাসুরের মতো পরনারী লোলুপ। তাদের হাতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা জানে না নারীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে ভোগ করলে পরিনামে অনেক দুর্দশা ভোগ করতে হয়। কারণ নির্যাতিত মানুষগুলো যখন সম্মিলিতভাবে মায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করবে তখন ভোগবাদী আসুরিক শক্তির মানুষ পরাজয় হবে। দুর্গাপূজার কাঠামো বিন্যাস করলে এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার একটা চিত্র চোখে পড়বে।