বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে গতকাল। পিতৃপক্ষের অবসানের মধ্য দিয়ে বুধবার ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দেবীপক্ষ। ভোরে পুরোহিতের চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবী দুর্গার আবাহন করা হয়।
গতকাল ভোরে চট্টগ্রামের চণ্ডীতীর্থ মেধস আশ্রমে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহবান জানানো হয়। বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে চণ্ডীতীর্থ মেধস আশ্রমের পাশাপাশি নগরীর ও জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে এবং মন্দিরে চণ্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন এবং ঢাক–কাঁসর ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানিয়েছেন ভক্তরা।
দুর্গোৎসবের তিন পর্ব : মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা। দুর্গাপূজার প্রস্তুতি পর্ব বা মহালয়ার প্রথম প্রহরে শেষ হয় পিতৃপক্ষের আর শুরু হয় দেবীপক্ষের। একইসঙ্গে দুর্গাপূজার মূল অংশের প্রস্তুতিপর্ব হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস, শরতের বাতাসে এখন যেন মন্দ্রিত হচ্ছে রূপংদেহি, জয়ংদেহি, যশোদেহি, দ্বিষোজহির সুরলহরি। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী থেকে। ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে শুভ মহালয়া উদযাপন মাধ্যমে দেবীপক্ষ উদ্বোধন করা হয়। মেধস আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী বুলবুলানন্দ মহারাজ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। চণ্ডীতীর্থ মেধস আশ্রমে মহালয়া উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ–সভাপতি বিপুল কান্তি দত্ত। বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) সুদীপ্ত সরকার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন, সহ–সভাপতি সুনীল কান্তি ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালিত, অনুপ রক্ষিত, রুনু ভট্টাচার্য,
সাংগঠনিক সম্পাদক রিমন কান্তি মুহুরী, বোয়ালখালী উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি রাজীব চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক বিশুরাম বসু সাটু, ইউপি চেয়ারম্যান এম এ মান্নান, বাবলী ঘোষ। অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল –চণ্ডী পাঠ, পূজা, যজ্ঞ, অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ বিতরণ।
জেএম সেন হলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের মহালয়া উদ্যাপন : বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে দেবীপক্ষের মহালয়া নগরীর জেএম সেন হলে দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে বিকালে চণ্ডীপাঠ করেন শুভাশীষ আচার্য্য টিটু। পরবর্তীতে জাতীয় ও পরিষদের পতাকা উত্তোলন, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন ও শ্বেত কপোত উড্ডয়ন করা হয়।
স্বাগত বক্তব্য দেন, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল। অতিথি ছিলেন পরিষদের সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল কান্তি দে, অ্যাড. চন্দন কুমার তালুকদার, সহ–সভাপতি অধ্যাপক অর্পণ ব্যানার্জি, সুমন দেবনাথ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রত্নাকর দাশ টুনু, শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত, সহ–সভাপতি বিপ্লব কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিখিল কুমার নাথ, সজল দত্ত, অ্যাড. নটু চৌধুরী, বিপ্লব সেন, অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফন্টের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বরণ বিশ্বাস, পরিষদের সম্পাদক দোলন দেব, দীপংকর দেবনাথ, প্রিয়তোষ ঘোষ রতন, রিপন রায় চৌধুরী, অসীম কুমার দে, রাজন দাশ, অসিত বরণ বিশ্বাস, অমিত ঘোষ, সবুজ দাশ, দোলন দেব, টিটু চৌধুরী, অয়ন ধর, রাসেল দত্ত প্রমুখ। এছাড়াও নগরীর ১৬ থানার সভাপতি ও সম্পাদকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ছিলো মহালয়া পূজা ও সন্ধ্যায় ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ : দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে দেবীপক্ষের মহালয়া উপলক্ষে বোয়ালখালীর চণ্ডীতীর্থ মেধস আশ্রমে গতকাল দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে ছিল– মহালয়া পূজা, চণ্ডীযজ্ঞ, আলোচনা সভা ও মহাপ্রসাদ বিতরণ। দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ রন্জন দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল দেবের পরিচালনায় পৌরহিত্যে করেন স্বামী বুলবুলানন্দ মহারাজ। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা এডিশনাল পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) মো. আরিফুর রহমান, বোয়ালখালী থানা অফিসার ইনচার্জ মো. গোলাম সরওয়ার, করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হামিদুল হক মান্নান।