মহামারীর শ্বাসরুদ্ধকর সময়ের অনুভূতি ‘আইসিইউ’

চট্টগ্রামে লিটন করের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ

লিটন কর চট্টগ্রামের সন্তান। চারুকলায় লেখাপড়া করেছেন। চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। শুধুমাত্র চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ থেকে এই শহর ছেড়ে থিতু হয়েছেন রাজধানী ঢাকায়। যুক্ত আছেন নতুন দিনের নতুন সিনেমা নির্মাণ প্রক্রিয়ায়। প্রোডাকশন ডিজাইন, সহযোগী পরিচালক, সহপরিচালনাসহ ডিজাইন করেছেন একাধিক সিনেমার পোস্টার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মানুষের বাগান’, ‘শনিবার বিকেল’, ‘আজব কারখানা’, ‘কাঠবিড়ালী’, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, ‘ঢাকা মেট্রো’ ও ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্পের পুরো প্রচারণা’।

আইসিইউ’ তার প্রথম নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। গতকাল সন্ধ্যায় নগরের দুই নম্বর গেট সিলভার স্ক্রিনে চট্টগ্রামের শিল্পবোদ্ধা, লিটন করের প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ, বন্ধুবান্ধবসহ একঝাঁক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উপভোগ করেন লিটন করের সৃষ্টি ওঈট (ও ঝঊঊ ণঙট)। পরিচালনার পাশাপাশি উইন্ড স্টোরিজ নিবেদিত চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা, ক্যামেরা ও স্ক্রিনপ্লে করেছেন লিটন নিজেই। কোভিড মহামারীকে গ্লোবাল পলিটিক্যাল গেমের একটা অংশ বলে মনে করেন নির্মাতা। তিনি বলেন, সেই সময়ে অন্য সবার মতো আমিও একটা চাপ অনুভব করছিলাম। পৃথিবীর সব দেশে একসাথে লকডাউন; এত বড় ঘটনা পৃথিবীতে আগে ঘটেনি। শ্বাসরুদ্ধ সেই সময়ের অনুভূতিই ‘আইসিইউ’। বর্তমান চলমান বিশ্বে মহামারীর এই কালে আমি অন্য এক আকালকে দেয়ালের ওপাশে অনুভব করি। অনুভব করি অপ্রত্যাশিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার। ‘আইসিইউ’ নামটি দলিত মানুষের নিশ্বাসপ্রশ্বাসের টানাপোড়েন এবং তারই কল্পনায় পরাশক্তিদের প্রত্যক্ষ করাএই দুই অর্থেই ব্যবহার করেছি। এই ছবিটিতে মানুষের দলীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় আধিপত্য বিস্তার অথবা পৃথিবী নামক গোলার্ধে পক্ষপ্রতিপক্ষের দখলদারিত্ব এবং ক্ষমতাশালী পরাশক্তির আগ্রাসী আধিপত্যে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষের অনুভূত শ্বাসরুদ্ধ অনুভূতিকেই প্রকাশ করতে চেয়েছি।

এরই মধ্যে লিটন করের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আইসিইউ’ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি পুরস্কার জিতেছে। ভুটানের ড্রুক ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম উৎসবে ডেব্যু ফিল্ম ডিরেক্টর হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন নির্মাতা। ওয়ার্ল্ড ফিল্ম কার্নিভাল সিঙ্গাপুরে বেস্ট সাইলেন্ট ফিল্ম হিসেবে পুরস্কার জিতেছে। লন্ডনের লিফটঅফ গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, ভারতের গোয়া চলচ্চিত্র উৎসব, পুনে শর্ট ফিল্ম উৎসব, কেরালা শর্ট ফিল্ম উৎসব, দাদা সাহেব ফালকে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম উৎসব, তার্কির রোটারি ফিল্ম উৎসব, ইতালি, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি লিফট অব চলচ্চিত্র উৎসবসহ মোট ১৪টি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ‘আইসিইউ’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এটা অনন্য অর্জন।

আইসিইউ’র মিউজিক করেছেন রাশেদ শরীফ শোয়েব, সাউন্ড ডিজাইন করেছেন সজীব রঞ্জন বিশ্বাস ও রাজেশ সাহা। সম্পাদনা ও গ্রেডিং করেছেন শরিফ আহমেদ। আর্ট ডিরেকশন করেছেন গৌতম কর। সিনেমাটির নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন তানভীর হোসাইন। শুভশ্রী নামের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুষমা সরকার এবং পাওয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাকীয়া বারী মম।

প্রদর্শনী শেষে স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী আহমেদ নেওয়াজের সঞ্চালনায় উপস্থিত দর্শনার্থীদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির দত্ত, আহমেদ ইকবাল হায়দার, চিত্রশিল্পী অলক রায়, চলচ্চিত্র নির্মাতা আনোয়ার হোসেন পিন্টু, চলচ্চিত্র সংগঠক শৈবাল চৌধূরী প্রমুখ। তারা বলেন, চট্টগ্রামের সন্তান চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা লিটন কর নির্মিত ‘আইসিইউ’ ১১ মিনিটের ছবি হতে পারে, কিন্তু এর রেশ থেকে যাবে দীর্ঘদিন। করোনাকালীন বিভীষিকা যে কী তার অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের প্রত্যেকের আছে। লিটন সেই সময়টাকে ধারণ করেছেন ১১ মিনিটে। এই দীর্ঘ সময়টাকে মাত্র ১১ মিনিটে নিয়ে আসার কাজটা কঠিন। লিটনের কাছে অনুরোধ থাকবে, নিজের ভালো লাগা থেকে, নিজেকে সন্তুষ্ট করতেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন। তার কাছ থেকে আমরা এ ধরনের চলচ্চিত্র আরো বেশি চাই।

চলচ্চিত্রটির মুখ্য অভিনয়শিল্পী সুষমা সরকার জানালেন শ্যুটিং চলাকালীন নিজের অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, লকডাউনের সময় ‘আইসিইউ’র শুটিং করেছি। আমরা সবাই ঘরবন্দি। লিটন কর ছবি আঁকছেন। তখন হুট করে তার মাথায় কাজটির আইডিয়া এল। শুটিং শেষ হতে এক বছর সময় লেগেছিল। কাজ করার সময় লাইটও ছিল না। তখন সবকিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। দোকান বন্ধ ছিল। পরে বাড্ডার একটি দোকান থেকে লাইট জোগাড় করে লিটন। ওর প্রথম ছবি। লিটন কর এত খুঁতখুঁতে নির্দেশক যে, আমাকে সারা রাত ধরে পায়ের শট দিতে হয়েছে। আবার তরমুজের একটি দৃশ্য ছিল। তেলাপোকা তরমুজ খাচ্ছে। সেজন্য তেলাপোকা আনতে হয়েছে বাসায়। পরপর দুদিন এ দৃশ্য ধারণ করতে হয়েছে। তেলাপোকাগুলো বাসায় ছড়িয়ে পড়ে। কখনো ভাবিনি ‘আইসিইউ’ এমন জায়গায় যাবে। এটি একটি সাইলেন্ট মুভি। দর্শকের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অসাধারণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনেপালের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশে রপ্তানি হবে
পরবর্তী নিবন্ধকাপাসগোলায় নবরূপে দেমিরেল স্বাস্থ্য ক্লিনিকের যাত্রা