মহামারীর দিনে দেশে কমেছে গড় আয়ু

জন্মহার কমে বেড়েছে মৃত্যুহার

| মঙ্গলবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাড়ার পর বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমার তথ্য দিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোবিবিএস। এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালে দেশে জন্মহার কমার পাশাপাশি মৃত্যুর হার ছিল আগের বছরের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ’ জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। তার আগের বছর গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। কমেছে শূন্য দশমিক ৫ বছর বা ছয় মাস। এছাড়া ২০২১ সালে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ছিল ১৮., যা ২০২০ সালে ছিল ১৮.১। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জন্মহার হাজারে কমেছে ০ দশমিক ৭ জন। অন্যদিকে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় ওই বছর স্থূল মৃত্যুহার পাওয়া যায় ৫., যা ২০২০ সালে ছিল ৫.১ জন। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাওয়ের বিবিএস সম্মেলন কক্ষে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী গতবারের মত এবারও পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি। আর গড় আয়ু বেশি কমেছে পুরুষদের। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশের পুরুষ বাঁচে গড়ে ৭০ দশমিক ৬ বছর, নারীর গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ১ বছর। আগের বছর পুরুষের গড় আয়ু পাওয়া যায় ৭১ দশমিক ২ বছর। আর নারীর ছিল ৭৪ দশমিক ৫ বছর। অর্থাৎ পুরুষের গড় আয়ু কমেছে ০ দশমিক ৬ বছর, নারীর কমেছে ০ দশমিক ৪ বছর। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার বছরে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৭ দশমিক ২ বছর।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৩০১ জন, যা ২০২০ সালে তা ছিল ১ দশমিক ৩০৩ জন। তবে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীপ্রতি সন্তানের সংখ্যা আগের বছরের মতোই পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে তা ছিল প্রতি হাজার ২.০৫, যা আগের বছর ছিল ২.০৪। গত চার বছর ধরেই এ হার মোটামুটি এক জায়গায় স্থির আছে। তবে সাধারণ প্রজনন হার ২০২০ সালে প্রতি হাজারে ১.০১ থেকে কমে পরের বছর হয়েছে ০.৯৯ জন।

পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, ২০২১ সালের ১ জুলাই সারা দেশে একযোগে এ জরিপ চালানো হয়। এক হাজার ২০০ নমুনা এলাকার ৩ লাখ ৩ হাজার ২৫০টি খানা থেকে গণনাকারীরা তথ্য সংগ্রহ করেন। জন্মহার কমার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র পাওয়া গেছে জরিপে। দেখা গেছে, ২০২০ সালে দম্পতিদের ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন, পরের বছর তা বেড়ে হয়েছে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের অনুপাত বেশি। গ্রামে এটি পাওয়া গেছে ৬৫.৭ শতাংশ, যা শহরে ৬৫ শতাংশ।

কোভিড১৯ মহামারী চলাকালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার ছিল প্রতি হাজারে ২৮, যা আগের দুই বছরের সমান। এক বছরের নিচে এই হার ২০২১ সালে পাওয়া গেছে ২২, যা আগের বছর ছিল ২১। প্রতি লাখ শিশুর জন্মের বিপরীতে মাতৃ মৃত্যুর অনুপাত পাওয়া গেছে ১৬৮ জন, যা ২০২০ এ ছিল ১৬৩ জন।

জনসংখ্যার সিংহভাগ কর্মক্ষম : আলমগীর জানান, ২০২১ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি । এর মধ্যে ৮ কোটি ৫৯ লাখ নারী এবং ৮ কোটি ৪৩ লাখ পুরুষ। এই জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছর। ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ। জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৮ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। যদি ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী জনসংখ্যাকে কর্মক্ষম ধরা হয়, তাহলে তা মোট জনসংখ্যার ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ ওই শ্রেণিতে পড়ে। এই জরিপে ২০২১ সাল মানুষের স্থানান্তর হার কমার তথ্য মিলেছে। আবার শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাওয়ার হার প্রায় দ্বিগুণ হতে দেখা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র লাইলাতুল কদর আজ
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক ফরেস্টার সুলতানুল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা