খাগড়াছড়ির রামগড় পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলছে মহাবিপন্ন প্রাণী চশমা পরা হনুমান। বিগত কয়েক বছর ধরে পৌরসভার ডেবারপাড়, জগন্নাথ পাড়া, গর্জনতলী প্রভৃতি এলাকায় এরা বিচরণ করছে। কয়েক বছর আগেও এদের সংখ্যা ছিল ১৩ থেকে ১৫টি। তবে বর্তমানে তা বেড়ে ২০ থেকে ২৫টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন লাভলু।
তিনি বলেন, আমার বাড়ির পেছনে হনুমানের দলটি প্রায় হানা দেয়। বাঁশ ঝাড়ের কচি ডগা খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে। এছাড়া ফলের মৌসুমে এরা প্রায় এসে আম, কাঁঠাল খেয়ে যায়। তবে এখন গাছের কচিপাতা খায়। কয়েকদিন পরপর তারা আসে। দলবদ্ধভাবে আসে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটা হনুমান বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছে। খাবারের অভাবেই মূলত তারা লোকালয়ে মানুষের কাছাকাছি চলে আসছে। অনেকে গুলতি বা ঢিল ছুড়ে তাদের তাড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে আহতও হচ্ছে এই হনুমানগুলো।
রামগড়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কফি প্রকল্পে কাজ করেন খাগড়াছড়ি হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাথোয়াই মারমা। তিনি বলেন, চশমাপরা হনুমানের দলটি প্রায় আমাদের প্রকল্প এলাকায় আসে। রামগড় ছাড়া জেলার অন্য কোথাও এখনো চশমাপরা হনুমান চোখে পড়েনি। তারা এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। কারণ এখানকার নির্বিচারে বন উজাড়। খাদ্য সংকটের কারণে তারা লোকালয়ে আসছে। তারা মানুষের সাথে একটা সাংঘর্ষিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
দুই চোখের চারপাশে গোলাকার বৃত্তের মতো সাদা রং থাকায় এদের চশমা পরা হনুমান বলে। এদের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ধূসর কালো রঙের। লেজ বেশ লম্বা। লোমশ শরীর। মাথা ও শরীরের দৈর্ঘ্য ৫৩ সে.মি এবং লেজের দৈর্ঘ্য ৭৬ সে.মি। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার বা আইইউসিএন চশমাপরা হনুমানকে ২০০৮ সালে বিশ্বে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বনে এদের দেখা যায়।
চশমাপরা হনুমানসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বিপন্ন হওয়ার জন্য নির্বিচারে বন উজাড় ও মনো কালচারকে দায়ী করছেন পিটাছড়া বন্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে তিনি।
তিনি বলেন, এখানে বন যেভাবে উজাড় হচ্ছে তাতে বন্যপ্রাণীর আবাস নষ্ট হয়েছে। হাজার হাজার একরের গাছপালা উজাড় করে চাষ হচ্ছে এক ফসলি কাসাভা, আনারস ইত্যাদি। এছাড়াও সেগুন, আকাশমনি, পাম, রাবার ইত্যাদি চাষের জন্য নির্বিচারে বন্যপ্রাণীর খাবার ও বাসস্থান ধ্বংস করা হয়েছে। এই কারণে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। চশমাপড়া হনুমান ও লজ্জাবতী বানর প্রায় বিলুপ্তির পথে। বন ও বন্যপ্রাণী বাঁচাতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও কৃষি মন্ত্রণালয় একসাথে মিলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, খাগড়াছড়ির বন বিভাগে বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় বন বিভাগের কোন বরাদ্দ নেই। তবে কেউ যাতে বন্যপ্রাণী শিকার করতে না পারে সেজন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে আমরা বেশ কিছু বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছি। রামগড় রেঞ্জ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, চশমপরা হনুমান রক্ষায় যাতে সচেতনামূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়।