যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস–২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে সরকার বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সমপ্রতি ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব কর্মসূচি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ বা প্রচারসহ সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এদিন সূর্যোদয়ের পরপরই দেশের সকল সরকারি, আধা–সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়, বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন বেসরকারি বেতার বা টিভি চ্যানেলে সঠিক মাপ ও রংসহ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধি–বিধান জনসাধারণের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করবে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি–বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে। তবে ১৪ ডিসেম্বর রাতে আলোকসজ্জায় আলো জ্বালানো যাবে না। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় একত্রিশ বার তোপধ্বনি বাজানো হবে। ওইদিন ভোর ৬টা ৩৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিদেশি কূটনীতিকরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে। খবর বাসসের।
১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
সকল জেলা এবং উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলা এবং শিশুদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে বিদেশি অধ্যাপক, প্রথিতযশা নাগরিক, স্থানীয় প্রশাসন, গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিল্পী–সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তি এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একক বা যৌথভাবে এবং চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জাহাজ এদিন সকাল ৯টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুবিধাজনক সময়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া অনুষ্ঠান–ফুটবল ম্যাচ, টি–টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, কাবাডি ও হাডুডু খেলার আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশে টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়া, ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সিনেমা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মিলনায়তন বা উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। জাদুঘর ও বিনোদনমূলক স্থান শিশুদের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এসব স্থানে তাদের বিনা টিকিটে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে। দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম এতিমখানা/পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, ডে–কেয়ার ও শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রীতিভোজের আয়োজন করবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহে জাতীয় পতাকা, বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও রঙিন নিশান দিয়ে সাজানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডাক অধিদপ্তর মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়ন কামনায় সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত বা প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।