আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। ১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার ৫৪তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। আজ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কাট্টলীস্থ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে (ডিসি পার্কের দক্ষিণ পার্শ্বে) পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
বাসস জানায় : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা–বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে বিজয় দিবস উদ্যাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়াও, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা–সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে।
মহান বিজয় দিবস দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া হবে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী সকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে শহরের তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে পৃথকভাবে ফ্লাই–পাস্ট প্রদর্শন করবে। সেখানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে। এছাড়া, দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা একই রকম ফ্লাই–পাস্ট প্রদর্শনী পরিচালিত হবে। এর পাশাপাশি, পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনী দেশব্যাপী ব্যান্ড শো আয়োজন করবে। সমস্ত অনুষ্ঠান জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো প্রবেশ ফি ছাড়াই সারাদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, অন্যদিকে দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। এছাড়াও, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা এবং পায়রা বন্দর, ঢাকা সদরঘাট, পাগলা এবং বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসি জেটিতে সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, ডে–কেয়ার সেন্টার, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র এবং শিশু পরিবার এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহান বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের কর্মসূচিতে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কাট্টলীস্থ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে ৩১ বার তোপধ্বনি ও পুস্পস্তবক অর্পণ, সকল সরকারী–বেসরকারী, আধা–সরকারী ও বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মহান বিজয় দিবসের শুভ উদ্বোধন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র–ছাত্রীদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন। সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠাতব্য মহান বিজয় দিবস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন। বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আহসান হাবীব পলাশ ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন। বেলা ১২টায় সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকেটে ছাত্র–ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মিলনায়তনে বা উন্মুক্ত স্থানে বস্তুুনিষ্ট ও নৈর্ব্যত্তিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ‘চট্টগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সর্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মহানগর বিএনপির কর্মসূচি : চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি মহান বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের স্বাধীনতার গৌরবকে স্মরণ করে একটি বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১০টায় পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। জমায়েত শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করবে। র্যালি রেলস্টেশন রোড হয়ে লালদীঘির পাড়স্থ জেলা পরিষদ চত্বরে পৌঁছে শেষ হবে।
র্যালিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীদের এই র্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।












