আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন আজ। নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে এদিন বাঙালি জাতির জীবনে এসেছে নতুন প্রভাত। বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
দীর্ঘ লড়াই–সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি অর্জন করেছে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি পেয়েছে একটি সার্বভৌম দেশ, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল–সবুজ পতাকা। পেয়েছে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের অস্তিত্ব আর মর্যাদা।
বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হল আজ। ৩০ লাখ শহীদ ও দু’ লাখ মা–বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় এ বিজয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। ‘শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাঁড়ের আর খুলির স্তুপ একদিন পাললিক হয়।’
বাংলার দামাল ছেলেরা হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। মুক্তির নেশায় এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে জীবনবাজি রেখে শুরু করে মুক্তির যুদ্ধ। ‘ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ডিসেম্বর মাসে শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।’ অতঃপর ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে হানাদাররা। বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে গ্রহণ করে স্বাধীনতার স্বাদ।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। সরকারি–বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাস ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
এদিকে আজ ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নগরের কাট্টলীতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কাট্টলীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হবে। পরে সেখানেই পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। বেলা ১২টা থেকে চট্টগ্রামের সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকেটে ছাত্র–ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং দেশের সর্বত্র উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রমাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।