সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কিম্বা চলমান সময়কে ফ্রেমবন্দী করার মাধ্যম গণনা। গোষ্ঠী, সভ্যতার নিরীখে মানুষ কোনো এক ঘটনাকে নির্ভর করেই গণনার মাধ্যমে সময়কে ধরার চেষ্টা করে। শুরু হয় গণনাবর্ষ। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাইয়ের সূর্যাস্তের সময়কে অর্থাৎ ১৬ জুলাই থেকে হিজরী সন শুরুর সময় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। নবুয়তের পর মক্কায় হযরত মোহাম্মদ (স) নও মুসলিমদের নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে। তাদের উপর মক্কাবাসীর নির্যাতন বেড়ে যায় দিনের পর দিন। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন মদীনায় হিজরত করার। আর এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে ৬৩৮–৩৯ খ্রিস্টাব্দে হজরত আলী (রা.) ও উসমান (রা.) পরামর্শে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) তার খিলাফতকালে হিজরতের ১৭তম বর্ষে মহররম থেকে হিজরী সন গণনা শুরু করেন। ইসলাম আসার আগে আরবের সমষ্টিগত কোনো গণনাবর্ষ ছিল না। সে সময় তারা গোষ্ঠি নির্ভর প্রসিদ্ধ ঘটনা অবলম্বনে বছর, মাস গণনা করত। হিজরী ক্যালেন্ডারের গণনা নির্ভর করে চাঁদের আবর্তন–বিবর্তনের উপর। চাঁদের আবর্তন ও বিবর্তনে সদা সচেতনতা ও গূঢ় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। সূর্যের মতো উদিত হওয়া ও অস্ত যাওয়ার মধ্যেই চাঁদ সীমিত নয়। চাঁদের উপরেই নির্ভর করে পৃথিবীর অনেক প্রাকৃতিক গতিবিধি, যেমন সাগরের জোয়ার ভাটা, মানুষ, পশু–পাখি, উদ্ভিদরাজী ইত্যাদি অনেক কিছুই অবর্তিত হয়ে থাকে। চান্দ্রমাসের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত ইবাদতের তারিখ, ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরী সনের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম।