মহানবীর (দ.) দুনিয়ায় শুভাগমন : আল্লাহপাকের সেরা অনুগ্রহ

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | শনিবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়ায় শুভাবির্ভাব মানবজাতিসহ জগৎবাসীর জন্য আল্লাহপাকের সেরা অনুগ্রহ ও নেয়ামত স্বরূপ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বোত্তম মহামানব তিনি। কুরআন মজিদে আল্লাহপাক বলেন, ইন্নাকা লাআলা খুলুকিন আজিম অর্থাৎ আপনি সর্বোত্তম গুণ ও চরিত্রের অধিকারী। বছর পরিক্রমায় ফিরে এলো মহিমান্বিত রবিউল আউয়াল মাস। এই মাসের ১২ তারিখে ধরণীকে আলোকিত করে তশরিফ আনেন মানবতার নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবীপ্রেমী লাখো জনতা আজ জেগেছে আবার। ঈমানী উদ্দীপনা নিয়ে রাজপথে হেঁটে হেঁটে প্রিয় নবীর (.) প্রতি তাজিম ও শ্রদ্ধা জানানোর দিনটি বছর ঘুরে আবারো ফিরে এলো। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (.) মানে চট্টগ্রামের জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (.)। আজিমুশ্বান জশনে জুলুছে আজ শামিল লাখো লাখো নবীপ্রেমী সুন্নি জনতা। বছরের এই ১২ রবিউল আউয়াল তথা মহিমান্বিত দিনটির অপেক্ষায় থাকেন সুন্নি জনতা। এই দিন মানে নারায়ে তকবির, রেসালত ও গাউসিয়াতের ধ্বনির মাধ্যমে আওলাদে রাসূলকে সামনে রেখে প্রিয়নবীর (.) প্রতি তাজিম ও সম্মান প্রদর্শনের শুভ মুহূর্ত।

হৃদয়ে হৃদয়ে বাজছে আজ সালাতসালামের মোহনীয় সুর। ঈদে মিলাদুন্নবী (.) সারা বিশ্বে মুসলিম জনপদে নানা আয়োজনে বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় উদ্‌যাপিত হলেও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে আওলাদে রাসূল (.) এর নেতৃত্বে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের বৃহত্তর জশনে জুলুছের দিকেই বিশ্বের দৃষ্টি। বিশ্ব মিডিয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের টপ নিউজের অভিধা পেয়েছে কুতুবুল এরশাদ হাদীয়ে মিল্লাত আওলাদে রাসূল (.) আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.) এর নির্দেশ অনুসৃতির স্মারক এ জশনে জুলুছ। ৯ই রবিউল আউয়াল ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরীয়া তৈয়বিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে জশনে জুলুছের বড় জমায়েত ঘটে। এশিয়া খ্যাত শিক্ষালয় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার বিশাল ময়দানে জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবীর (.) মূল জমায়েতে নবীপ্রেমী জনতার উচ্ছ্‌্বাস উদ্দীপনার কোন তুলনাই হয় না। চট্টগ্রামঢাকায় জশনে জুলুছে আসা লাখো লাখো নবীপ্রমিক আশেক জনতা আছড়ে পড়ে ষোলশহরস্থ জামেয়া ময়দানে এবং কাদেরীয়া তৈয়বিয়ার জান্নাতি প্রাঙ্গণে। আওলাদে রাসুল (.)’কে এক নজর দেখতে আশেক জনতার কী ব্যাকুলতা হৃদয়োচ্ছ্‌্বাস তা চোখে দেখলে আঁচ করা যায়প্রিয় নবীর (.) আওলাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা কতো গভীরে। হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (.জি..) নবীপ্রেমী জনতার উজ্জীবনের মূল প্রেরণা জশনে জুলুছের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রায় চার দশক ধরে। তবে এ বছর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ) বাংলাদেশে আসছেন না। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে এ বছর ঢাকাচট্টগ্রামের জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন আওলাদে রাসূল (.) আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ)। তাঁর সঙ্গে এসেছেন পীরজাদা আল্লামা সৈয়দ কাসেম শাহ (মজিআ) ও পীরজাদা সৈয়দ মাহমুদ আহমদ শাহ (মজিআ)

দীর্ঘ খরার পর বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যেভাবে সতেজ হয়ে ওঠে তেমনি মাহে রবিউল আউয়ালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আওলাদে রাসূলের (.) অংশগ্রহণে আজিমুশশান জশনে জুলুছ শান মর্যাদা অনুভবআবেদনে আদতেই আজিমুশ্বানের চেয়েও বাড়তি কিছু নবীপ্রেমিকদের কাছে। হকপন্থী এবং বাতিলের অস্তিত্ব সবখানে। ইতিহাসও বলেবাতিলরা আছে, থাকবেই। অথচ ঈদে মিলাদুন্নবীর ‘সবছে আ’লা ওয়ালা হামারা নবীসবছে বালা ওয়ালা হামারা নবী’জশনে জুলুছের এই উচ্চরব নবীবিদ্বেষী ইসলাম বিকৃতকারীদের দুর্গ খান খান করে দেয়। বাংলাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার ইসলামাবাদ তথা চট্টগ্রামের জমিনে এবং পরবর্তীতে ঢাকাসহ দেশের সকল জেলা, থানাগ্রামে জশনে জুলুছের প্রসারতায় উজ্জীবিত এই দেশ, এই দেশের শান্তিকামী দ্বীনদার সত্যনিষ্ঠ কোটি মানুষ। দিনে দিনে জশনে জুলুছ পেয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সেরা ইসলামী কৃষ্টিসংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে। দেশে যারা এক সময় জশনে জুলুছের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে চায় নি বা বুঝেনি তারাও আজ ঈদে মিলাদুন্নবী (.) দিবসে বিশাল জশনে জুলুছ আয়োজনে অনেক দূর এগিয়েছে। আওলাদে রাসূলের (.) কাজের বড় সার্থকতাসাফল্য এখানেই।

গাউসে জমান কুতুবে আলম আল্লামা হাফেজ সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.) আগতঅনাগত অসংখ্য ওলী বুজুর্গের মধ্যে জশনে জুলুছের দ্বীনি সংস্কৃতির প্রবর্তক হিসেবে বিশ্ব ইতিহাসে, বিশ্ব মানসে বিশিষ্ট মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। অন্য অনেক দ্বীনি খেদমতের পাশাপাশি ‘জশনে জুলুছ’এর মতো দ্বীনি জজবাপূর্ণ ব্যতিক্রমী অথচ কালজয়ী পদক্ষেপের কারণেই আল্লামা হযরত সৈয়দ তৈয়ব শাহ (রহ) মহান মুজাদ্দেদের কাতারে উপনীত। অসাধারণ কর্মকীর্তির গুণে আধ্যাত্মিক ব্যক্তির মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে গাউসে জমান আল্লামা সৈয়দ তৈয়ব শাহ (রহ.)। তাঁরই দ্বীনি ও তরিকতের মিশনকে উজ্জ্বলভাবে আগলে রেখেছেন যোগ্য উত্তরাধিকার হাদিয়ে মিল্লাত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (.জি..) ও মুর্শেদে করিম আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (.জি..)। কুতুবুল এরশাদ আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি (.) সিরিকোট কাননের ফুলের সৌরভে আজ সুরভিত, স্পন্দিত এই দেশের মাটি ও মানুষ। বিশ্বের বহু মুসলিম দেশে সাড়ম্বরে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে পালিত হয় ঈদে মিলাদুন্নবী () উপলক্ষে জশনে জুলুছ। মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, লিবিয়া, মিশর, দারুচ্ছালাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারতসহ দেশে দেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনে জশনে জুলুছের দৃশ্য তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে সবার সামনে আজ উন্মুক্ত। নবী বিদ্বেষী তাগুতি শক্তিকে নবীপ্রেমের চেতনায়জাগরণে পরাভূত করার মোক্ষম সুযোগ এনে দেয় জশনে জুলুছ।

গাউসে জমান আওলাদে রাসূল (.) আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ তৈয়ব শাহ (রহ.) জমানার বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ বা ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে আজ বিশ্বনন্দিত। অবক্ষয়তাড়িত অনৈতিকতা আশ্রয়ী বিকৃত সংস্কৃতির জোয়ারে নৈতিক চরিত্র বিকাশের ইসলামী সংস্কৃতি আজ হুমকির মুখে। মানুষের চিন্তায়বোধে, কর্মে অনুকূল পরিবর্তন আনাই হচ্ছে সত্যিকার সংস্কৃতি। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন, নবীপ্রেমী মানস গঠন এবং চিন্তায় কর্মে খাঁটি ঈমানদার হয়ে উঠার প্রেরণা জোগানোই ইসলামী সংস্কৃতির আসল লক্ষ্য। গাউসে জমান আল্লামা সৈয়দ তৈয়ব শাহ্‌ (রহ.) জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (.) এর মতো ভুবন মাতানো সেরা ইসলামী সংস্কৃতি উপহার দিয়ে পুরো মুসলিম মিল্লাতকে ঋণী করেছেন। মুসলমানদের জাগরণে, ঈমানী চেতনাউচ্ছ্বাসে সিক্ত ও শুদ্ধ হবার বড় উপলক্ষ জশনে জুলুছ। আল্লামা সৈয়দ তৈয়ব শাহ্‌ (রহ.) এর যোগ্য উত্তরাধিকার মুরশেদে বরহক আল্লামা সৈয়দ তাহের শাহ (. জি. ) এবং পীরে বাঙাল আল্লামা সৈয়দ সাবির শাহ (. জি. ) এর বিশেষ ভূমিকায় এ জশনে জুলুছ আজ বাংলাদেশের অঙ্গন ছড়িয়ে দেশে দেশে বিস্তৃত হচ্ছে। বিশ্বজমিনে আজ যে অশান্তি, অরাজকতা, হানাহানির ধ্বংসাত্মক থাবা এবং নবীওলী বিদ্বেষীদের যে দৌরাত্ম্যঔদ্ধত্য চলছে তার বিপরীতে শান্তির বাতাবরণে ঐক্যসংহতি গড়ার ডাক দেয় জশনে জুলুছ। জশনে জুলুছে মানুষে মানুষে মিলনের উৎসবে মিছিলের ঐকতানে অন্যায়, মিথ্যা জুলুম ও ঈমানআক্বীদা বিনাশী তৎপরতা পিছু হটবেই ইনশাআল্লাহ। এই আশাবাদ নবী ওলীপ্রমি সুন্নি জনতার। মুক্তিকামী দেশবাসীর এবং বিশ্ব মানুষের। জশনে জুলুছের চেতনায় শিক্ষায় নতুন স্বপ্নে বড় কর্ম সম্পাদনে, ঈমানি দায়িত্ব পালনে, সুন্নিয়তের দ্বীনি পয়গাম সমুন্নত করার প্রচেষ্টায় আসুক অনুকূল জোয়ার। জশনে জুলুছ হয়ে উঠুক হকপন্থী শান্তি অন্বেষী বিশ্বের সমগ্র মানুষের ঈমানআক্বীদা ও হুব্বে রাসূলের (.) ভিত্তিতে ঐক্যের জাগরণেরআত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠতম অবলম্বন। এবারের জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবীতে (.) নবীপ্রেমীদের অযুত কণ্ঠে ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ও আয়োজনে জশনে জুলুছ উদ্‌যাপন করুন’ এই বলিষ্ঠ আওয়াজ ধ্বনিত হোক। রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করুক কোটি নবীপ্রেমীর আর্তিআর্জি। প্রিয় নবীর (.) প্রতি ভালোবাসা, আনুগত্য ও তাঁরই আদর্শে প্রতিষ্ঠিত থাকার অবিনাশী প্রেরণা হোক জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জশনে জুলুছ হয়ে উঠুক সুন্নি জনতার ঐক্য ও উজ্জীবনের মাইলফলক। আমরা আশা করবো লাখো লাখো নবীপ্রেমী জনতার অংশগ্রহণে চট্টগ্রামের বিশ্বের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুছকে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড বা জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ইসলামী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেওয়া হোক।

লেখক: সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র জশ্‌নে জুলুসে ঈদ এ মিলাদুন্নবী (দ.) : মুসলিম জাতির আনন্দের দিন
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) : মানব ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ দিন