মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে কারা আসছেন

নতুন নেতৃত্ব হোক কর্মীবান্ধব : প্রত্যাশা তৃণমূলের

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ১৫ জুন, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

কারা আসছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে? এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দলটির তৃণমূল থেকে নীতি নির্ধারণী ফোরামে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্য রাতে বিলুপ্ত করা হয় মেয়াদোত্তীর্ণ নগর বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি। বিষয়টি জানাজানি হতেই শুরু হয় নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা। বিদায়ী কমিটির শীর্ষ দুই নেতাসহ নয়জন আছেন এ তালিকায়। গতকাল দিনভর তাদের নিয়ে চলে নানা গুঞ্জনও। তবে দলটির তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশা, দলের বিগত ‘আন্দোলনসংগ্রামে’ যারা সক্রিয় ছিলেন তারাই নেতৃত্বে আসুক। একইসঙ্গে নতুন নেতৃত্ব হোক কর্মীবান্ধব। এদিকে নেতৃত্বে আসতে চাচ্ছেন এমন নেতাকর্মীরা ধর্না দিচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে। নানাভাবে তদবির করছেন দলের হাইকমান্ডে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা আজাদীকে জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে বিলুপ্ত করা হয় নগর বিএনপির কমিটি। একইসঙ্গে যে কোনো মুহূর্তে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ নতুন নেতৃত্বের জন্য। এক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতামত গুরুত্ব পাবে বেশি। বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন তিনি।

আলোচনায় যারা : সভাপতি বা আহ্বায়ক পদে আলোচনায় আছেন বিলুপ্ত কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ। তিনি ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম৮ আসন থেকে নির্বাচন করেন। এছাড়া সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান, সদস্য আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল এবং নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তি।

এর মধ্যে এরশাদ উল্লাহ এবং নাজিমুর রহমানের সঙ্গে গত সপ্তাহে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান নগর বিএনপির নানা বিষয় নিয়ে অনলাইনে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে। ফলে এই নেতার অনুসারীরা তাদের নিয়ে আশাবাদী।

এদিকে সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এবং সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের যে কোনো একজনকে আহ্বায়ক বা সভাপতি করা হতে পারে বলেও গুঞ্জন আছে। বাকি একজনকে কেন্দ্রীয় বিএনপির কোনো পদ দেয়া হবে।

কী বলছেন বিদায়ী কমিটির দুই শীর্ষ নেতা : ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। তিনি বলেন, সামনে কাদের নেতৃত্বে আনবেন সেটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত আছে, এ সেটাপ নিশ্চয়ই ঠিক করে রেখেছেন। তবে যারাই নেতৃত্বে আসুক তারা যেন তৃণমূল কর্মীদের আন্দোলনমুখী করতে পারেন এবং কর্মীদের পাশে থাকেন। এখানে নেতৃত্ব মানে কেবল দল চালানো নয়, কর্মীদের সামাজিকভাবে সহযোগিতা করাও অংশ। অনেক কর্র্মী হামলামামলা ও জেলজুলুমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্টে আছেন তাদেরকেও দেখতে হবে নতুন নেতৃত্বকে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, আন্দোলনমুখী হওয়ার পাশাপাশি কর্মীদের পাশে থাকা সবকিছু চিন্তা করতে হবে নতুন নেতৃত্বকে।

কমিটি বিলুপ্ত প্রসঙ্গে আবুল হাশেম বক্কর আজাদীকে বলেন, দলের হাইকমান্ড যেটা ভালো মনে করেছেন সেটা করেছেন। একই সঙ্গে যাদের উপযুক্ত মনে করবেন তাদের নেতৃত্বে আনবেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালে ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতকে সভাপতি ও আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের কমিটির করা হয়। যা ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। তারও আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সভাপতি এবং ডা. শাহাদাত হোসেন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নগর বিএনপির।

কেমন নেতৃত্ব চান তারা : এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, দলের জন্য যারা নিবেদিত প্রাণ, যারা দুর্দিনে ছিলেন, আন্দোলনসংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, দুর্দিনে দলের হাল ধরেছেন এবং যারা পরীক্ষিত তাদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব আসলে সুন্দর হবে। দলের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন এদের অনেকে অতীতে বঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকেও মূল্যায়ন করা হোক। এতে সবাই খুুশি হবেন। এ বিএনপি নেতা বলেন, আহ্বায়ক কমিটি না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিলে ভালো হবে।

নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, তৃণমূলের প্রত্যাশা হচ্ছে দলের জন্য ত্যাগী এবং যোগ্যরা নেতৃত্বে আসুক। এমন নেতৃত্ব আসা উচিত যারা ছোটবড় সবাইকে নিয়ে সংগঠনের জন্য কাজ করবেন, যাতে দল উপকৃত হয়। অবশ্যই ভালো এবং সাংগঠনিক লোক প্রয়োজন। তবে দলের হাইকমান্ড যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই চূড়ান্ত।

সদরঘাট থানা বিএনপির সভাপতি হাজী সালাহউদ্দিন আজাদীকে বলেন, দুঃসময়ে অনেক সিনিয়র নেতাকে দেখা না গেলেও বহু নেতাকর্মী সক্রিয় ছিলেন। তৃণমূলের প্রত্যাশা তাদের মূল্যায়ন করা হোক। আওয়ামী লীগের মত দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার জন্য যোগ্য এবং কর্মীবান্ধব কাউকে নেতৃত্বে আনলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি হবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ষা এলো
পরবর্তী নিবন্ধবাস ও ট্রেনে জনস্রোত