ওরা নয় জন। পকেট কাটে, ছিনতাই করে, করে ডাকাতিও। থাকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু সিন্ডিকেট হিসেবেই তারা কাজ করে। তাদের মধ্যে আছে মহাজন, আছে জমাদার, মিস্ত্রি, পাসম্যান, ঠেকবাজ, আর আছে ক্রেতা; রেয়াজউদ্দিন বাজারে যার মোবাইলের দোকান আছে। গ্রুপের আট সদস্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর শেখ মুজিব রোড থেকে ধরা পড়েছে ডবলমুরিং থানা পুলিশের হাতে। গ্রেপ্তার আট জন হল- তাজুল ইসলাম তাজু (৩৬), তুষার হোসেন (২৫), মো. তপু (২২), হায়াত মাহমুদ জীবন (২৩), আনোয়ার হোসেন বাবু (২১), নাজমুল ইসলাম (২৮), আব্দুর রহমান রানা (২০) এবং জনি শাহ (৩২)। ছিনতাইকারী টিমের থেকে একটি এলজি ও একটি কার্তুজ, ৩ টি ছোরাসহ ছিনতাইয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং ৮ টি ছিনতাই করা মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তবে চোরাই মোবাইলের মূল ক্রেতা রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন জুয়েলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হলেও সে পালিয়ে যায়।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, এ টিমের অপরাধ জীবন দীর্ঘদিনের। ধরা পড়ে, বের হয়ে আবারো একই কাজ করে। এদের মধ্যে তাজু হলো তাদের মহাজন। তাদের ভাষায় মহাজনের কাছেই মালামাল জমা দেওয়া হয়, বিনিময়ে সে টাকা দেয়। সে-ই উল্লেখিত মালামাল বিক্রির ব্যবস্থা করে। এছাড়া যারা টার্গেট করা লোককে আটকায় তারা ‘ঠেকবাজ’, যারা মালামাল ছিনিয়ে নেয় তারা ‘মিস্ত্রি’, যারা ছিনিয়ে নেওয়া মালামাল সরিয়ে ফেলে তারা ‘পাসম্যান’ ও যারা মালামাল জমা রাখে তারা ‘জমাদার’। গ্রেপ্তার আট জনের মধ্যে তাজু মহাজনের দায়িত্ব পালন করে। তুষার জমাদার, তাজুল ও রানা মিস্ত্রির দায়িত্বে থাকে। নাজমুল পাসম্যান এবং বাকিরা ঠেকবাজ হিসেবে ছিনতাইয়ে ভূমিকা রাখে। গ্রেপ্তারের পর মোবাইল ফোনগুলো জমাদার তুষারের থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি মহসীন জানান, এই চক্রের সদস্যরা দিনে গণপরিবহনে বিশেষ করে বিভিন্ন রুটের সিটি বাসে ওঠে ছিনতাই করে। তারা একসঙ্গে বাসে ওঠে। ৩-৪ জন ঠেকবাজের দায়িত্ব পালন করে টার্গেট করা যাত্রীকে ঘিরে জটলা তৈরি করে। একজন মিস্ত্রি জটলার মধ্যে দ্রুত মোবাইল-মানিব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাসম্যানের কাছে দিয়ে দেয়। পাসম্যান সেটা জমাদারের কাছে দেয় এবং জমাদার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়। এসময় যাত্রী যদি বুঝতে পারেন যে তার মোবাইল-মানিব্যাগ নেই, তিনি চিৎকার করেন, তাকে ঘিরে যারা জটলা তৈরি করেছে, তারাও ওই যাত্রীর সঙ্গে যোগ দেয়। উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। এটা গণপরিবহনে তাদের ছিনতাইয়ের কৌশল। নগরীর কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত তাদের বিচরণ। আর সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা সংঘবদ্ধভাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। রিকশা-সিএনজি টেক্সির যাত্রী কিংবা পথচারীকে টার্গেট করে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করে।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি আরও জানান, জমাদার তুষার ছিনতাই করা মোবাইল-টাকা মহাজন তাজুর কাছে হস্তান্তর করে। মহাজন সেটা আব্বাসের কাছে বিক্রি করে টাকা নগদ করে। প্রত্যেক সদস্যকে দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। কাজ হোক না হোক, বেতন ঠিকই চলে।
তুষার পুলিশকে জানিয়েছে, তাজু ছিনতাই করা মোবাইল ফোন রেয়াজউদ্দিন বাজারে আব্বাস উদ্দিন জুয়েল নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। চোরাই মোবাইল কেনাবেচার অভিযোগে আব্বাসকেও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি মহসীন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হলেও আব্বাস পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে ওসি জানিয়েছেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া আজাদীকে জানান, চক্রের দলনেতা তাজুল প্রায় দেড় যুগ ধরে নগরীতে ছিনতাই করে আসছে। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাইয়ের মামলা আছে কমপক্ষে ২০টি। গ্রেপ্তারও হয়েছে ২০ বার। স্বীকারোক্তিতে তাজুল জানায়, ‘নিজের শ্বশুর বাড়িতে অতবার যায় নাই, লাল দালানের শ্বশুর বাড়িতে (কারাগার) যতবার গেছে’। বারবার জামিনে বেরিয়ে সে ছিনতাইকারী চক্র গড়ে তোলে। গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের বিরুদ্ধেও কমপক্ষে ৫টি করে ছিনতাইয়ের মামলা আছে। এবার গ্রেপ্তারের পর প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আরো দুইটি মামলা যোগ হয়েছে।