মহাকাশে মস্তিষ্কের কোষ দ্রুত পরিপক্ব হয়?

| বুধবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মহাকাশে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ সুস্থ থাকে ও পৃথিবীর চেয়ে তা দ্রুত পরিপক্ক হয়। এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। এর আগে করা অসংখ্য গবেষণায় খতিয়ে দেখা হয়েছে দেহের পেশি, হাড়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কগনিটিভ ফাংশনের ওপর মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা সীমিত আকারের মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব। এ গবেষণার আগ পর্যন্ত কোনো গবেষণায় মহাকাশ কীভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষকে প্রভাবিত করে তা সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস। খবর বিডিনিউজের।

মস্তিষ্ক কীভাবে প্রভাবিত হয় তা আরো ভালোভাবে বুঝতে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি দল নিউ ইয়র্ক স্টেম সেল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিলে মস্তিষ্কের কোষ থেকে আসা বিভিন্ন স্টেম কোষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্লাম্প পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএসে। এর এক মাস পর এসব অর্গানয়েডকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনেন গবেষকরা। অর্গানয়েড হচ্ছে কোনো একটি অঙ্গের ক্ষুদ্র ও সরলীকৃত সংস্করণ।

এ গবেষণার সহলেখক ও স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জেনি লরিং বলেন, এসব কোষের মহাকাশে টিকে থাকার বিষয়টিই ছিল সবচেয়ে বড় বিস্ময়।

পৃথিবীতে থাকা কোষের তুলনায় দ্রুত পরিপক্ক হয়েছে আইএসএসে থাকা বিভিন্ন কোষ। মস্তিষ্কের কোষ বেড়ে ওঠার কয়েক মাস পরে আইএসএসের কোষের আরএনএ চেহারার বিভিন্ন ধরন পৃথিবীতে থাকা কোষের সঙ্গে তুলনা করেছেন গবেষকরা। সেলুলার স্তরে মহাকাশের পরিবেশ কীভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে তা পরীক্ষা করতে গবেষণা দলটিকে সাহায্য করেছে আরএনএ চেহারার এই তুলনাটি।

লরিং বলেন, মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে এরা দ্রুত বিকশিত হয়েছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এগুলো কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নিউরন ছিল না। ফলে বার্ধক্য সম্পর্কে এটি আমাদের কিছুই জানায়নি।

গবেষণা দলটির কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল এসব কোষে পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান দেওয়ার বিষয়টি। কারণ এদের নির্দিষ্ট ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ তরল প্রয়োজন, যা নিয়মিত পরিবর্তনও করা দরকার। আইএসএসে ল্যাবের কাজের পরিমাণ কমাতে নতুন এক পদ্ধতি তৈরি করেছে গবেষণা দলটি, যা বিভিন্ন ক্রায়োভিয়ালে ছোট কোষ তৈরি করে। ক্রায়োভিয়াল হচ্ছে, খুব কম তাপমাত্রায় জৈবিক নমুনা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত শিশি। এসব ক্রাইওভিয়ালকে এক মাসের জন্য আইএসএসে পাঠানো হয়েছিল ইনকিউবেটরে করে। গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর তুলনায় কম প্রতিলিপি তৈরি করেছে আইএসএসে থাকা মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ।

লরিং বলেছেন, মহাকাশে ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার ভিত্তি তৈরি করেছে গবেষণাটি, যেখানে আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ, যা প্রভাব ফেলে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ওপর। মস্তিষ্কের যে অংশটি আলঝেইমার রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়, পরবর্তী সময়ে আমরা সেটি নিয়ে গবেষণা করব বলে ঠিক করেছি। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে স্টেম সেল ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ, স্বজনদের দাবি হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধভিটেবাড়ির উচ্ছেদ ঠেকাতে রাস্তায় ২০ হাজার মানুষ