মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম জোরদারে ২০ দিনের ‘বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি’ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন চারটি ওয়ার্ডে নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও মশার ওষুধ ছিটানো হবে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে কর্মসূচি চলবে ১১ মার্চ পর্যন্ত। সংস্থাটির পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৩২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী। প্রতিটি ওয়ার্ডে পর পর দুদিন ৫৭ জন করে পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করবেন। এর মধ্যে ৫০ জন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করবে। পাঁচজন হ্যান্ড স্প্রে এবং দুজন ফগার মেশিন দিয়ে মশার কীটনাশক ছিটাবে। এছাড়া মজুদ রাখা হয়েছে ১৬ হাজার লিটার এলডিও (কালো তেল নামে পরিচিত) ও সাত হাজার লিটার ‘লার্ভিসাইড’ (মশার লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক)। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ‘এডাল্টিসাইড’ পর্যাপ্ত মজুদ নেই। তবে তা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংগ্রহের পূর্বে ঢাকায় ছিটানো কীটনাশকের সঙ্গে চট্টগ্রামে ইতঃপূর্বে ব্যবহৃত কীটনাশকের কোনো পার্থক্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পরিচ্ছন্ন বিভাগের একটি টিমকে ঢাকা পাঠানো হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নবনির্বাচিত চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। একইদিন সুধী সমাবেশ করে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি। এতে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অগ্রাধিকার পাবে বলেও জানিয়েছিলেন। মেয়রের ঘোষিত কর্মপরিকল্পনাকে সামনে রেখেই প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ দিনের ‘বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি’ গ্রহণ করে পরিচ্ছন্ন বিভাগ। এ বিষয়ে জানার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
অবশ্য গতকাল সকালে পরিচ্ছন্ন বিভাগের দায়িত্বশীলদের বৈঠক করে কর্মসূচি প্রণনয়নের নির্দেশনা দেন তিনি। সভায় উপস্থিত এক পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয় বলেছেন, খাল-নালা পরিষ্কার করা সিডিএর চলমান জলাবদ্ধতা মেগাপ্রকল্পের আওতায়। এরপরও তারা কখন পরিষ্কার করবে তার অপেক্ষায় থাকার সময় নাই। মানুষও অত কিছু বুঝে না। শহরে মশা বেড়েছে। এজন্য সিটি কর্পোরেশনকে গালাগালি করছে সবাই। তাই খাল-নালা পরিষ্কার করে সেখানে মশার ওষুধ ছিটাতে হবে।
সভায় উপস্থিত চসিকের প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহার এখন চসিকের ইশতেহার। ইশতেহারের ১৫ নং অনুচ্ছেদে নগরকে মশামুক্ত করতে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক ছিটানো, পুকুর, ডোবা, খাল-নালা, জলাশয় পরিষ্কারের কথা উল্লেখ আছে। মেয়রের নির্দেশে এখন থেকে এই কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হবে।
কোন ওয়ার্ডে কোনদিন : ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব ষোলশহর, পশ্চিম ষোলশহর, চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ষোলকবহর, বাগমনিরাম, পূর্ব বাকলিয়া ও দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে, ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি চান্দগাঁও, মোহরা, জামালখান ও এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী ও লালখনা বাজার ওয়ার্ডে, ২৮ ফেব্রয়ারি ও ১ মার্চ পশ্চিম মাদার বাড়ি, পূর্ব মাদার বাড়ি, পাথরঘাটা ও বঙিরহাট ওয়ার্ডে, ২ ও ৩ মার্চ উত্তর আগ্রাবাদ, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডে, ৪ ও ৫ মার্চ উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর ওয়াডে, ৬ ও ৭ মার্চ দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে এবং ৮ ও ৯ মার্চ দক্ষিণ পাহাড়তলী, দক্ষিণ কট্টলী, দেওয়ানবাজার ও উত্তর হালিশহর ওযার্ডে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।