মশা নিধনে পরীক্ষামূলক ওষুধ সংগ্রহ করছে চসিক

১৮৫০ লিটার কীটনাশক সরবরাহের কার্যাদেশ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠার পর ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ মশক নিধনে ওষুধ সংগ্রহ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এক হাজার ৮৫০ লিটার কীটনাশক সরবরাহে গত বৃহস্পতিবার কার্যাদেশ দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে এক হাজার ৬০০ লিটার পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী এডাল্টিসাইড এবং ২৫০ লিটার লার্ভা ধ্বংসকারী লার্ভিসাইড রয়েছে।
অভিযোগ আছে, মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেলেও চসিকের মশক নিধন কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। অনেক এলাকায় মাসের পর মাস দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নাই বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, ‘কার্যকর’ কীটনাশকের সংকট রয়েছে চসিকে। কীটনাশক সংগ্রহে গত মাসে তিন দফা পরীক্ষা চালিয়েও ওষুধ কিনেনি সংস্থাটি।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘মশক নিধনে কার্যকর ওষুধের সংকট ॥ না কিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময়ক্ষেপণ চসিকের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর টনক নড়ে চসিকের এবং দ্রুতসময়ে ওষুধ সংগ্রহে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে নির্দেশনা দেন মেয়র। গত ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের সাধারণ সভায় মশক নিধন ইস্যুতে ব্যাপক হট্টগোলও হয়েছে। বেশিরভাগ কাউন্সিলর দ্রুত ওষুধ সংগ্রহ করে ওয়ার্ড পর্যায়ে সরবরাহের দাবি জানান।
জানা গেছে, চসিকের কার্যাদেশ দেয়া লার্ভিসাইডের নাম ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’। এডাল্টিসাইডের নাম ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’। প্রতি লিটার টেমিফস ৫৯০ টাকা এবং ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড তিন হাজার ৮৮০ টাকায় সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওষুধের এ দাম নিয়ে গত সাধারণ সভায় আপত্তি জানিয়েছিলেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন। তার দাবি, আরো কম দামে কার্যকর ওষুধ পাওয়া যাবে। ওষুধ ক্রয়ে কার্যাদেশ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, কীটনাশক দুটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌ-বাহিনী ব্যবহার করে। তারপরও আমরা পরিমাণে কম নিচ্ছি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করে কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য। ছিটানোর পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য কিছু ওষুধ আইইডিসিআরে (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) পাঠাব। কার্যকর হলে পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে ওষুধ সংগ্রহ করব।
কার্যাদেশ দেয়া ওষুধ আগামী বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে চসিকে পৌঁছুবে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, লার্ভিসাইড পরিমাণে কম হলেও সংকট হবে না। কারণ আগে ‘এম ফস ২০ ইসি (ক্লোরপাইরিফস)’ নামের যে লার্ভিসাইড ছিটাতাম সেটা প্রতি লিটার পানিতে ২০ এমএল মিশাতাম। পরবর্তীতে চবি গবেষক দলের রির্পোট পাওয়ার পর ৩৫ থেকে ৪০ এমএল মিশিয়েছিলাম। কিন্তু ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ মিশাতে হবে মাত্র দুই থেকে তিন এমএল। পানির গভীরতা থাকলে সর্বোচ্চ পাঁচ এমএল মিশানো যায়। এর বেশি ব্যবহারের নিয়ম নাই।
চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. মোবারক আলী আজাদীকে বলেন, ইতোপূর্বে কার্যকর ওষুধ সংগ্রহে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিও ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ ব্যবহারের সুপারিশ করেছিল।
চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস আজাদীকে বলেন, বর্তমানে আবহাওয়ার যে তাপমাত্রা তা মশার জন্য অনুকূল। কাজেই এ সময়ে মশার উপদ্রব বাড়বে। তিনি বলেন, গত ৩০/৩৫ দিন বৃষ্টি হয়নি। তাই স্বচ্ছ পানি জমে থাকার সম্ভাবনা নাই, যেখানে এডিস মশার বিস্তার ঘটবে। তবে ঘরে পানি জমিয়ে রাখলে এডিসের জন্ম হতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মশার ওষুধ ছিটনোর উপর সিটি কর্পোরেশনকে জোর দেয়ারও পরমর্শ দেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসব দেশকে প্রস্তুত থাকতে বলল ডব্লিউএইচও
পরবর্তী নিবন্ধপদ্মা অয়েলে কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ, একজন ওএসডি