মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার বিষয়ে বেশি জোর দিতে হবে

| বুধবার , ২০ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

দায়িত্ব গ্রহণ করার পর প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। আর দায়িত্ব নেয়ার বর্ষপূতিতে নগরীতে মশার অসহনীয় উপদ্রবের কথা অকপটে স্বীকার করে এ নিয়ে লজ্জিত বলে জানিয়েছেন তিনি। মেয়র বলেছেন, মশার উপদ্রবের কথা অস্বীকার করছি না। মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল একটি ফর্মুলা দিয়েছে। সেটা আমরা প্রয়োগ করছি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ওষুধও প্রয়োগ করছি। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। অবস্থা এমন হয়েছে, দিনেও মশা, রাতেও মশা। মশা নিয়ে আমি খুবই বিড়ম্বনায় আছি।

গত ১৮ এপ্রিল ‘রাতে মশা, দিনেও মশা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, মশার উপদ্রব বৃদ্ধির বিষয়টি মেয়র স্বীকার করলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মশক নিধনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর তৃতীয় তফসিল ‘জনস্বাস্থ্য’ বিষয়ে যে ক্ষমতা তার আলোকে মশক নিধনে ব্যবস্থা নিতে হবে সংস্থাটিকে।

এছাড়া গত বছরের ২৫ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ‘জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর, মশকনিধন বছরভর’ স্লোগানে দেশে প্রথমবার জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করে। এতে চসিকের জন্য কার্যপ্রণালী ঠিক করা হয়েছে। যা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করছে না সংস্থাটি। সর্বশেষে গত মাসে সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন বিষয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়ও চসিকের জন্য করণীয় ঠিক করা হয়। এক মাস পার হলেও তা কার্যকর হয়নি নগরে। ফলে মশার উপদ্রব বাড়ছে শহরে। কীটতত্ত্ববিদগণ বলছেন, বৃষ্টি হলে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপদ্রব বাড়বে। তবে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় বর্তমানে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে নালা-নর্দমা পরিষ্কারের পাশাপাশি লার্ভা নিধনে ‘লার্ভিসাইড’ ছিটাতে হবে। তবে চসিক পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ‘এডাল্টিসাইড’ ছিটানোর উপর জোর দিচ্ছে। গত পাঁচ মাসে চার হাজার ২০০ লিটার ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ নামের এডাল্টিসাইড কিনেছে চসিক।

বিপরীতে মাত্র ২৫০ লিটার ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ নামে লার্ভিসাইড সংগ্রহ করে সংস্থাটি। তবে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, খাল-নালায় কালোতেল (এলডিও) ছিটানো হচ্ছে যা লার্ভা দমনে কার্যকর। বর্তমান মেয়রের মেয়াদকালে ৫৬ হাজার লিটার কালোতেল সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে দৈনিক আজাদীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত প্রায় ১৫ দিন ধরে কালো তেলের মজুদ নাই চসিকে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, কালো তেল হচ্ছে ‘এলডিও’ এবং ‘এএইচএসডি’ নামে দুটি উপকরণের মিশ্রণ। পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে এ মিশ্রণ সংগ্রহ করে চসিক। তবে ১৫ দিন আগে পদ্মা অয়েল কোম্পানি চসিককে জানিয়ে দেয়, মিশ্রণ সরবরাহ করা হবে না। উপকরণগুলো আলাদা আলাদাভাবে সংগ্রহ করে চসিককে মিশাতে হবে। ফলে এই ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে কালোতেল সংগ্রহ করতে সময় লাগছে।

মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধনে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, মশা যাতে জন্মাতে না পারে, সে জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মশার লার্ভা ধ্বংসে কীটনাশক ছিটানো, উড়ন্ত বা পূর্ণবয়স্ক মশানিধনে ধোঁয়া মারা (ফগিং করা) এবং জৈবিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রথম তিনটি কাজ অবশ্যই একসঙ্গে চালাতে হবে। এর মধ্যে কোনো একটি করা না হলে মশানিধন সম্ভব নয় বলে জানান তাঁরা।

আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে মশক নিধনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনে জাতীয় গাইডলাইন উপেক্ষিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রণীত জাতীয় গাইডলাইনে ৩৪টি নির্দেশনা আছে। যার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করছে না চসিক। নির্দেশিকা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে রোগীদের বাড়িতে ও চারপাশের কমপক্ষে ৫০টি বাড়িতে এডিস মশা নিধনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসে অপরাহ্ন হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত এডাল্টিসাইড ও লার্ভা ধ্বংসে সকাল ৮ টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইড ছিটাতে হবে। পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংসসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে এক বছরের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে চসিককে। তবে সাড়ে সাত মাস পূর্ণ হলেও নির্দেশিকা অনুসরণ করেনি চসিক।

তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশকনিধন করা যাবে না। ধোঁয়া হয় বলে অনেকেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তাঁদের বাড়িতে অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ ছিটাতে দেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার বিষয়ে বেশি জোর দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে