মশক নিধন নিয়ে বিপরীত বক্তব্য

সাধারণ মানুষ বলছে কার্যক্রমে গতি নেই ।। সিটি কর্পো. বলছে প্রতিদিনই ওষুধ ছিটানো হচ্ছে ।। ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় বাড়ছে আতংকও

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নগরে সারা বছরই থাকে মশার উপদ্রব। সাস্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু রোগী ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকিত হচ্ছে নগরবাসী। ক্ষুব্ধ নগরবাসীর অভিযোগ, মশার উৎপাত বাড়লেও মশক নিধন কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনের গতি বাড়ছে না। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চসিকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
জানা গেছে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল গত মাসের শেষ সপ্তাহে নগরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি স্থান চিহ্নিত করে। তা চসিককে অবহিত করা হয়। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডবলমুরিং এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকা। এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে পরিচালিত মশা জরিপে দেখা গেছে, নগরে মশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গত বছর গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নগরের ৯৯টি স্থান পরিদর্শন করে ৫৭টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩৩ স্থানে এডিস, ৩৯ স্থানে এনোফিলিস ও ২২ স্থানে এডিস ও এনোফিলিস দুটোই পাওয়া গেছে। তবে ১৮ স্থানে এডিস ও ১২ স্থানে এনোফিলিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১৫ স্থানে শতভাগ এডিস ও দুই স্থানে শতভাগ এনোফিলিস পাওয়া গেছে। গত এক বছর ধরে পরিচালিত জরিপ ও গবেষণার এসব তথ্য থেকে নগরে মশার উপদ্রব বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট। উল্লেখ্য, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস ও ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা হচ্ছে এনোফিলিস। এদিকে গতকাল প্রকাশিত সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জন। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২১২ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছে ১১ জন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়লেও মশক নিধন কার্যক্রমে গতি না বাড়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ লোকজন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রণীত জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে রোগীদের বাড়িতে ও চারপাশের কমপক্ষে ৫০টি বাড়িতে এডিস মশা নিধনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসে অপরাহ্ন হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত এডাল্টিসাইড ও লার্ভা ধ্বংসে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইড ছিটাতে হবে। পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংসসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে এক বছরের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে চসিককে। অভিযোগ আছে, এ গাইডলাইন পুরোপুরি অনুসরণ করছে না চসিক।
ঘাটফরহাদবেগ এলাকার বাসিন্দা সুমন আজাদীকে বলেন, সারা বছর মশার কামড়ে অতিষ্ঠ থাকি। এরপরও তখন মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধি না পাওয়ায় কিছুটা নিশ্চিত থাকা যেত। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে তাতে ভয় বাড়ছে। তার দাবি, সিটি কর্পোরেশন যেভাবে মশার ওষুধ ছিটানোর কথা প্রচার করে বাস্তবতা তার উল্টো।
মুরাদপুর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা শাহানাজ আকতার বলেন, গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে সিটি কর্পোরেশনের কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মীকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।
খুলশী এলাকার বাসিন্দা শরীফ বলেন, আমাদের আবাসিক এলাকার আশেপাশে বড় কোনো ড্রেন নেই। আবার এলাকাও শহরের অন্যান্য অংশের চেয়ে মোটামুটি পরিচ্ছন্ন। কিন্তু এরপরও মশার অত্যাচারে বাসায় থাকতে পারছি না।
শহীদ নামে হালিশহরের এক বাসিন্দা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। তার ওপর লোডশেডিং। মাঝরাতে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন ফ্যান বন্ধ থাকে। এ সময় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠি।
চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম জোরালো করেছি। প্রতিদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে এডিসের লার্ভা সৃষ্টি হতে পারে এমন জমাটবদ্ধ পানি পেলে জরিমানা করা হচ্ছে। বর্তমানে পর্যাপ্ত কীটনাশক মজুদ আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশকৃত মাসকুবার সংগ্রহ করা হবে। চলতি সপ্তাহে সাড়ে ৫ হাজার লার্ভিসাইড মজুদ আছে। এডাল্টিসাইড কিছুটা কমে এলেও আরো ১০/১২ দিন ছিটানো যাবে।
চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম জোরালোভাবে চলছে। এডিস মশার বিষয়ে জনসচেতনতা ছাড়া উপায় নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিনে গলি, রাতে মূল সড়ক
পরবর্তী নিবন্ধমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি আরো জোরদারের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর