মশক নিধন কার্যক্রমে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্য প্রতি ওয়ার্ডকে চারটি ব্লকে ভাগ করা হচ্ছে। এরপর প্রতি ব্লকের জন্য একজন করে স্প্রে ম্যান নির্দিষ্ট করা হবে, যারা সারা বছর নির্ধারিত ব্লকে কীটনাশক ছিটাবে। এর বাইরে বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ এর আওতায়ও একাধিক স্প্রে ম্যান প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটাবেন। সামগ্রিক কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধানে গঠন করা হবে মনিটরিং সেল। বিষয়টি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মশক নিধন কার্যক্রমকে জোরালো করতে ১১৯টি স্প্রে মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে। কেনা হয়েছে কালো তেলসহ চার ধরনের ওষুধ। গত কয়েকদিন ধরে এসব ওষুধ ব্যবহারও শুরু হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে একটি কীটনাশক পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এর রিপোর্ট পাওয়ার কথা। ইতিবাচক ফলাফল মিললে কীটনাশকটি আরো ব্যাপক পরিমাণে ক্রয় করা হবে।
এ বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। স্প্রে মেশিন সংগ্রহ করেছি। সেনাবাহিনী যে ওষুধ ব্যবহার করে সেটা সংগ্রহ করে ছিটানো শুরু করেছি। এর কার্যকারিতাও পাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মশক নিধনে আলাদা ফোর্স করা হবে। এদের আলাদা পোশাক হবে। যাদের নিয়োজিত করা হবে তাদের অবহেলা ও অনিয়ম গ্রাহ্য হবে না। দায়িত্ব পালনে কেউ ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামগ্রিক বিষয়গুলো তদারকির জন্য মনিটরিং সেল করব। ইতোমধ্যে অফিসারদের দায়িত্বও দিয়েছি। মশার ওষুধের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে জোর দিচ্ছি। খাল-নালা থেকে মাটি উত্তোলন করছি। কারণ খাল-নালা পরিষ্কার না থাকলে সেখানে মশার লার্ভা জন্মায়। আবার বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়।
এদিকে পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংগৃহীত স্প্রে মেশিনগুলোর মধ্যে ৭০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার স্প্রে মেশিন আছে ১০টি। এছাড়া ৯টি ৬০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হ্যান্ড স্প্রে মেশিন, ১০টি ২০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হ্যান্ড স্প্রে মেশিন এবং ৯০টি ১৮ লিটার ধারণ ক্ষমতার হ্যান্ড স্প্রে মেশিন রয়েছে। এর বাইরে ১৩১টি পুরনো হ্যান্ড স্প্রে মেশিন এবং ৭৯টি ফগার স্প্রে মেশিন রয়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হওয়া ৭০টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিন এবং ২০টি ফগার মেশিন মেরামত করা হবে।
সংগৃহীত ওষুধের মধ্যে ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ নামের এক হাজার ৬০০ লিটার পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী এডাল্টিসাইড এবং ‘টেমিফস ফিফটি ইসি’ নামে ২৫০ লিটার লার্ভা ধ্বংসকারী লার্ভিসাইড রয়েছে। প্রতি লিটার ফেমিপস ৫৯০ টাকা এবং ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ তিন হাজার ৮৮০ টাকায় সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া লার্ভিসাইড হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রতি মাসে ১৬ হাজার লিটার কালো তেল (এলডিও এবং এইচএসডি) কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে এলডিও ১১ হাজার ২০০ লিটার এবং এইচএসডি কেনা হয় চার হাজার ৮০০ লিটার।
চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. মোবারক আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ইতোপূর্বে কার্যকর ওষুধ সংগ্রহে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিও ‘টেমিফস ফিফটি ইসি’ ব্যবহারের সুপারিশ করেছিল। ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ ওষুধটি সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীও ব্যবহার করে। তারপরও আমরা পরিমাণে কম কিনেছি এবং সেটা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠিয়েছি। এখন থেকে যে ওষুধ আমরা কিনব তা প্রতিবারই পরীক্ষা করা হবে। অর্থাৎ যত লটে ওষুধ আসবে তার প্রতিটাই পরীক্ষা করে কার্যকারিতা নিশ্চিত করব। প্রতি ওয়ার্ডকে চার ব্লকে ভাগের বিষয়ে বলেন, ব্লকগুলোতে যেসব স্প্রে ম্যানকে নিয়োগ করা হবে তারা অন্য কোনো কাজ করবে না। সারা বছর তারা ওষুধই ছিটাবে।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, যে ওষুধ মজুদ আছে সেটা দিয়ে প্রতিদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্প্রে করছি। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নাই।