পৌষে চলে চারদিকে পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম। খেজুরের রস দিয়ে নানা রকমের পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। কনকনে শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে আড়মোড়া ভেঙে লেপ থেকে বের হতে মন সায় দেয় না। শীতপ্রধান প্রায় দেশ এখন বরফে ঢেকে আছে। কিন্তু তপ্ত মরুভূমিতেও এখন তুষারপাত হচ্ছে। তপ্ত মরু আর মরু নেই।
তুষারপাত ঘটছে সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চল তাবুক এলাকায়। তুষারপাত তীব্র হলে তা দেখতে উৎসাহী লোকজনের ভিড় জমে যায়। অনেককে বরফের বল বানিয়ে খেলে। শ্বেতশুভ্র তুষারে ছেয়ে গেছে জেরুজালেমও। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবানন ও জর্দানে তীব্র শীত প্রবাহ বয়ে চলেছে। আর সেসব দেশের বরফের প্রভাব সৌদি আরবে গিয়ে পৌঁছেছে। পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ অঞ্চলে তুষারপাতের মতো বিরল ঘটনায় চমকে গেছেন অনেকে।
বরফে ঢেকে গেছে বিশ্বের দীর্ঘতম মরুভূমি সাহারা। সেখানে তাপমাত্রা নেমেছে -২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত ৪২ বছরে এই নিয়ে চতুর্থবার এমন দৃশ্য দেখা গেল। এমনিতে গরমকালে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি আশপাশে থাকলেও শীতকালে কিন্তু জাঁকিয়ে ঠাণ্ডাই পড়ে সাহারায়।
সাহারায় প্রথমবার বরফ পড়তে দেখা গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে। কিন্তু পরবর্তী সাড়ে তিন দশকে আর বরফ পড়েনি সেখানে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফের তুষারপাত হয় সাহারায়। তারপর আবার ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। তিন বছরের ব্যবধান পেরিয়ে আবারও ২০২১ সালের জানুয়ারি সাক্ষী হল এই নয়নাভিরাম দৃশ্যের। ৩৬ লাখ বর্গমাইল জুড়ে সাদা বরফের চাদর দেখে মুগ্ধ নেটিজেনরা। সব থেকে মনোহর নিঃসন্দেহে সাদা মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা উটের ছবি। উটের পিঠে চড়ে সাদা বরফের প্রান্তর পেরুনো হয়তো অনেকেরই স্বপ্ন। সাহারা কিন্তু এই মুহূর্তে সেই সুযোগ করে দিচ্ছে পর্যটকদের।
কিন্তু তুষারপাত আজও এখানে এক অলীক কল্পনার মতো মনে হয়। যা এই মুহূর্তে নিখাদ বাস্তব। আর তার ফলে প্রবল সমস্যায় পড়তে হয়েছে মরু শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের। রাস্তা, বাস ও গাড়ি সবকিছুই ঢেকে গেছে বরফে। এটি একটি পরিচিত সত্য যে মরু ভূমিগুলির চরম আবহাওয়া রয়েছে এবং তাদের মরুভূমি বলা হয় না। কারণ তারা খুব গরম কিন্তু তারা অত্যন্ত শুষ্ক। রাতে, শুষ্ক বায়ু, আর্দ্র বাতাসের চেয়ে অনেক দ্রুত তার তাপ হারায়। এখন, বায়ু উত্তর গোলার্ধের উচ্চ চাপের এলাকাগুলির চারপাশে ঘড়ির কাঁটার দিকে চলে। ঠাণ্ডা আর্টিক বায়ুকে টেনে নিয়ে যায়। ইউরোপে একটি উচ্চ চাপের গঠন, আর্টিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাসকে টেনে নামিয়ে দেয়, যা দক্ষিণ ইউরোপের মধ্য দিয়ে সাহারা মরু ভূমিতে অবতরণ করে। এই ঠাণ্ডা বাতাস পরে উচ্চতায় উঠে তুষারপাত ঘটায়। চাপ যত বেশি হবে, বাতাস তত বেশি দক্ষিণে যেতে পারে। যাহোক, গ্লোবাল সিটিজেনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে বৈশ্বিক আবহাওয়ার ধরন বদলে যাওয়া বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও হতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন গত শতাব্দীতে মরু ভূমির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। ‘সাহারাতে ফুটলরে রঙ্গীন গুলে- লালা/ সেই ফুলেরই খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ারা/ সাহারাতে ফুটলরে ফুল/ সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি/ চাঁদ- সুরুয, গ্রহ- তারায়।’










