বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের ‘রক্ত ঝরছে’ বলে যে বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন, তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জির প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য ভারতের, মান্যবর মুখ্যমন্ত্রী তার সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার, ঘনিষ্ঠ ও উষ্ণ। কিন্তু তার এই বক্তব্যে অনেকটা বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে এবং বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে কয়েকদিনের সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে অনেকে হতাহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স–এ একটি পোস্ট দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে। এ বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া কী, জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। তার এমন বক্তব্যে বিভ্রান্তির ছড়ানোর অভিযোগ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সেজন্য আমরা তার এই বক্তব্যের ব্যাপারে ভারত সরকারকে ইতোমধ্যে নোট দিয়ে জানিয়েছি।
সহিংসতার ঘটনার বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের ভূমিকা আহ্বান করে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতি রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত রোববার ‘প্রোটেক্ট ইউনূস’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউনূস কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য বিশ্বনেতাদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের তাদের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু করার আহ্বান জানান তিনি। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যকাণ্ডের তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন ইউনূস।
এই বিবৃতির বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আমি তার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, তার যে বিবৃতি, আমি যেটুকু পত্রিকায় পড়েছি, সেখানে তিনি এই যে রাষ্ট্রের উপর হামলা, সেই হামলার নিন্দা তিনি করেননি; বরং আইনশৃক্সখলা বাহিনীর গুলিতে মারা গেছে, সেটি শুধু তিনি উল্লেখ করেছেন এবং বিদেশি বিশ্বনেতাদের এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থাৎ আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশিদেরকে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন হস্তক্ষেপ করার জন্য, এটি রাষ্ট্রবিরোধী। এবং নোবেলবিজয়ী দেশের উপর, রাষ্ট্রের উপর যে হামলা হয়েছে, সেই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বরং বিবৃতি দিয়েছেন অন্যান্য বিষয় নিয়ে, সেটি সত্যি দুঃখজনক এবং এটি আসলে তার কাছে আশা করা যায় না। আমি এটির নিন্দা জানাই।
কিছু দূতাবাস কর্মীর আতঙ্কে দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, েেদশ থেকে চলে যাওয়ার মত কোনো পরিস্থিতি হয়নি। বাংলাদেশে ইতোপূর্বে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর যখন ফাঁসির রায় হয়েছিল, সেদিন একদিনে ১১২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল, একদিনে সারাদেশে অগ্নিসংযোগ–নৈরাজ্য চালানো হয়েছিল। এবার মূলত ঢাকা শহরে এটি করা হয়েছে। সুতরাং সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দুই–একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমরা দূতাবাসগুলোকে আশ্বস্ত করেছি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা স্টেশন ছেড়ে চলে যাওয়ার মত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তারাও আমাদেরকে সেটি জানায়নি। দূতাবাসকর্মীদের ঐচ্ছিক ছুটি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দূতাবাসগুলো আমাদেরকে জানিয়েছে, তারা ঐচ্ছিক ছুটি দিয়েছে। এটার পরিসংখ্যান আমরা জানি না, এটা নিজস্ব দূতাবাসের ব্যাপার আসলে। তারা কে ঐচ্ছিক নেবে, না নেবে সেটা তাদেরকে জানাবে। আমাদেরকে জানানোর প্রয়োজন নাই।
কোটা আন্দোলন ঘিরে কয়েকদিনের সহিংসতায় আল–জাজিরায় প্রকাশিত দেড়শ জনের মৃত্যুর খবরের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মৃতের সংখ্যা নিয়ে যেহেতু বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে, সুতরাং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে, মৃতের সংখ্যা নিয়েও নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সহিংসতায় কতজন আওয়ামী লীগ কর্মী, সাধারণ মানুষ এবং পুলিশ সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে, তা নিরূপণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ অনেকে মারা গেছে। একজন পুলিশ ঘরের মধ্যে ছিল। তাকে ঘর থেকে ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করেছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। তালেবান স্টাইলে ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে, মেরে তারপরে ঝুলিয়ে রেখেছে, এগুলো তালেবানরা করে।
এতদিনে মৃত্যুর সংখ্যা নিরূপণ করতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাবে খুব সহসা।
খবরের বিষয়ে আল–জাজিরা কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাতারে যে আমাদের রাষ্ট্রদূত আছে, তাকে দায়িত্ব দিয়েছি আল–জাজিরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য, আল–জাজিরা কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য। আল–জাজিরার হয়ে বা আল–জাজিরার জন্য যে সংবাদগুলো লোকাল অফিস দিচ্ছে, বেশিরভাগই মিথ্যা, বানোয়াট এবং বিকৃত। দেড়শ জনের মৃত্যুর সংবাদ সত্য না গুজব, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখুন, অনেকগুলো গুজব আছে। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বলবে।