মব জাস্টিস ও মোরাল পুলিশিংয়ের সুযোগ নেই : রিজওয়ানা হাসান

কথা বললেন নিবার্চন, চাঁদাবাজি ও অপরাধ দমন ও নদী দখল প্রসঙ্গে

| বুধবার , ৫ মার্চ, ২০২৫ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সরকার মব জাস্টিস ও মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশে মব জাস্টিস ও মোরাল পুলিশিংয়ের সুযোগ নেই। এটার বিরুদ্ধে সরকার সবসময় শক্ত অবস্থানে আছে। যেহেতু এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের অবস্থায় আমরা ফেরত আনতে পারিনি, আসেনি। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো জায়গায় মব জাস্টিস এবং মোরাল পুলিশিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। সরকারের অবস্থান স্পষ্ট, এটার সুযোগ নেই। খবর বিডিনিউজের।

গতবছর অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই ‘মব’ ও ‘মব জাস্টিস’ শব্দগুলো বার বার ফিরে ফিরে আসছে। বিভিন্ন ঘটনায় আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে দেখা গেছে উত্তেজিত জনতাকে। সর্বশেষ গত শনিবার ঢাকার লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে দুই তরুণীর ধূমপান করা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়, যা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। ওই ঘটনা নিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ওই ঘটনা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে, এটার ব্যাপারে উভয় পক্ষ পুলিশের সামনে আপসনামায় স্বাক্ষর করেছে, তাই ওটাকে চূড়ান্ত বলে গণ্য করতে হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা সরকার সমর্থন করে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় উভয়পক্ষই মনে করছে কথা কাটাকাটির একটা পর্যায়ে ঘটেছে। এটাকে তারা অপরাধ হিসেবে নিচ্ছে না। উভয়পক্ষ মীমাংসা করে নিয়েছেন। আর এগোতে চাচ্ছে না।

প্রয়োজন প্রচার ও সচেতনতা: ‘মব জাস্টিসের’ প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা বন্ধে ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। অতীতে দলীয় সরকারের সময়ও মব জাস্টিস ও মোরাল পুলিশিংয়ের ঘটনা ঘটত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন পূর্ণ উদ্যমে নেমে যাবে, তখন এ সমস্যাটার মাত্রা কমে আসবে। কেউ মব জাস্টিসের মুখোমুখি হলে সরকার তার পাশে দাঁড়াবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি বলেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলার উত্তরণে আরেকটু সময় লেগে যাচ্ছে। কোন ঘটনা কোন কারণে ঘটছে সেটার ব্যাখ্যা অনেক রকমের থাকে। কিন্তু যে ঘটনার সত্যতা পাচ্ছে, সেটা সরকার তুলে ধরছে। স্বৈরাচারের দোসরেরা কীভাবে পালিয়ে গেল, দেশ ছাড়ল, সেটা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

নিবার্চন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, তা আমরাও বলেছি, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, উনি একটা সময় বলেছেন, এ সময়টা কবে চূড়ান্ত হবে উনার মুখ থেকেই শুনবেন।

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য তাদের ‘নিজস্ব’ মন্তব্য করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এখানে আমাদের হ্যাঁ বা না বলার সুযোগ নেই কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। উনিতো যখন নির্বাচনের কথা বলেন, তখনতো ডিসেম্বর বাদ দেন না, তা নিয়েই বলেন। উনার মুখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখটা শোনার জন্য অপেক্ষা করেন। সরকারের প্রাধিকারের মধ্যে সংস্কার, নির্বাচন ও বিচার, তা ছাড়া দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা যে কোনো সরকারের প্রাধিকারের মধ্যে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের তারিখ ঠিক হলে সবাই জানতে পারবেন। কিন্তু আলাপআলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির গণপরিষদ নির্বাচন এবং বিএনপিসহ অন্য দলের জাতীয় নির্বাচন চাইছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এখানে সরকারের অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবে। নির্বাচন গণপরিষদ হবে, নাকি সংসদ, নাকি স্থানীয়, নাকি অন্য কিছু হবেু এগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে করবে। এক একটা রাজনৈতিক দল একেক একেক ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়। এটা সরকারের বিষয় না। জুলাই ঘোষণাপত্রের তেমন অগ্রগতির হয়নি জানিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তাদের মতামত পাঠিয়েছে, কিন্তু সব দল পাঠায়নি।

চাঁদাবাজি ও অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা : দেশে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের উদ্যোগ জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সরকার চাঁদাবাজি বন্ধে পদক্ষেপ নেবে এবং নিচ্ছে। কোন দল বা ব্যক্তি চাঁদাবাজি করল তা দেখবে না। কোনো বিশেষ দলের প্রতি ইঙ্গিত করলে, সে প্রশ্ন তাদেরই করা যেতে পারে। কিন্তু সরকারের অবস্থান হচ্ছে চাঁদাবাজিসহ অন্য যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।” স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় তার পদেই থাকছেন।

নদী দখল বন্ধে পদক্ষেপ : প্রতিটি ডিসিকে একটি করে নদী দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করার কর্মপরিকল্পনা পাঠানোর নির্দেশনা সরকার দিয়েছিল জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ৬৩ জন ডিসির কাছ থেকে কর্মপরিকল্পনা পেয়েছি। তাদের প্রস্তাব পর্যালোচিনা করছি, এখন আমরা কতটুকু সময় পাব তা দেখছি। এখন প্রতিটি বিভাগ থেকে একটি করে নদী, দেশের সবচেয়ে বেশি দূষিত তিনটি নদী, ঢাকার চারটি, কঙবাজারসহ ১৩টি নদী নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে ঢাকার চারটি নদীর বিষয়ে কথা হয়েছে।

বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেছে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে কথা বলেছি। বেইজিংয়ের মত শহরের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ১০ বছর সময় লেগেছে, খুব ভালো মানে যেতে ওদের ১৫ বছর লেগেছে। আমাদের ৩০৩৫ ভাগ বায়ু দূষণ আসে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে, সেখানে সীমান্তের পাশে অনেক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসে। আমরা প্রথমে ধুলা দূষণ কমাতে লক্ষ্য স্থির করেছি। নৌবাহিনীর সহায়তায় ঢাকার আশপাশের ইটভাটার ম্যাপ করেছি। চেষ্টা করব আগামী বছর যাতে এ ইটভাটাগুলো চালু না থাকে।

আমিন বাজার, ধামরাই, সাভারকে ব্রিকফিল্ড জোন ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার রোড ডিভাইডারগুলোতে সবুজায়ন করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভিসার খবর ভারতই দেবে, জটিলতা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধফুলকলির ফিরনি ও মাহলাবিয়া রোজাদারদের পছন্দের সেরা